বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৫-০২-২০১০

মোহাইমেন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেনুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে পটিয়ার মইজ্যারটেক এলাকা থেকে তাঁকে আটক করেছিল গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনার পর থেকে মোহাইমেন আত্মগোপনে ছিলেন।
ডিবি কার্যালয়ে মোহাইমেন প্রথম আলোকে জানান, গত বৃহস্পতিবার ষোলশহর রেলস্টেশনে প্রথমে তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে তিনি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পেছন পেছন সন্ত্রাসীরা তাঁকে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে তাদের একজন বলে, ‘ও না, ও না’। এ কারণে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মাথা ও হাত জখম হয়। তাঁর মাথায় ছয়টি সেলাই পড়েছে।
হামলাকারীদের চেনেন কি না—জানতে চাইলে মোহাইমেন বলেন, ‘আমি কাউকে চিনি না। তবে আমার মনে হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি না করাটা অপরাধ। এ কারণে আমার ওপর এই হামলা চালানো হতে পারে।’
আত্মগোপনে কেন ছিলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাইমেন বলেন, ‘ভয় ও আতঙ্কে আমি আত্মগোপন করি। কারণ, প্রকাশ্যে থাকলে মহিউদ্দিন খুন হওয়ার ঘটনায় একদিকে পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে; আরেকদিকে শিবির আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে।’
মোহাইমেন বলেন, ‘ষোলশহর এলাকায় আমিও টিউশনি করি। তবে আমি মহিউদ্দিনকে চিনতাম না। ঘটনার দিন আমি ষোলশহর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তখন সে আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। ট্রেন আসতে দেরি হওয়ায় আমি আমার ব্যাগটি রেখে পাশের দোকানে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম এবং মোবাইল ফোনে আমার এক বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছিলাম। এ সময় মাফলার দিয়ে মুখ ও গলা পেঁচানো চারজন যুবক আমার ওপর হামলা চালায়। আমি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করি। পরে চার সন্ত্রাসীর পেছনে থাকা অন্য একজন “ও না, ও না” বললে সবাই থেমে যায়।’
মোহাইমেন বলেন, ‘তারপর আমি দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখি, আমার পাশে যে যুবকটি দাঁড়িয়ে ছিল, সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায়। একপর্যায়ে ওই যুবক মাটিতে লুটিয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এরপর কী ঘটেছে, আমি জানি না। শুধু জেনেছি, ওই হতভাগ্য যুবকের নাম মহিউদ্দিন। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।’
মোহাইমেন বলেন, ‘আহত অবস্থায় আমি কোনোমতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে পাঁচলাইশ থানার কাছে একটি ক্লিনিকে যাই। এর আগে আমার ভাই মোমেনুল ইসলামের মোবাইলে ফোন করে ঘটনা জানাই। তিনিও ক্লিনিকে চলে আসেন। সেখানে মাথায় ছয়টি সেলাই এবং হাতে ব্যান্ডেজ করা হয়। চিকিত্সা শেষে আমি বোনের বাকলিয়ার বাসা চিশতি মনজিলে যাই। সেখানে শনিবার দিন পর্যন্ত ছিলাম। আত্মীয়স্বজনের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আমাকে শনিবার সন্ধ্যার দিকে পটিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।’
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তাঁর ছবি প্রচার সম্পর্কে মোহাইমেন বলেন, ‘এটা ঠিক নয়। কারণ, কোনো টিভি চ্যানেল আমার কাছে আসেনি বা ছবি নেয়নি। আমি আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় কেউ আমার ছবি তুলতে পারেনি।’
নগর পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেন। তাঁকে পাওয়ায় আমরা এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য পাব বলে আশা করছি।’ তিনি রাত ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
এর আগে গতকাল বিকেলে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র মোহাইমেনের সন্ধানে নগরের বাকলিয়ায় তাঁর বোনের বাসায় যায়। সেখানে তাঁকে না পেয়ে তাঁর ভাই মোমেনুল ইসলামকে আনা হয়। এর পরই পুলিশ মোহাইমেনকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠে।
চার ভাই ও ছয় বোনের মধ্যে মোহাইমেন সবার ছোট। তাঁর বাবা অধ্যক্ষ সিরাজুল ইসলাম কুতুবি মারা গেছেন। দুই বোনের সঙ্গে তাঁর মা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন