ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ১৫-০২-২০১০
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে থাকার ক্ষেত্রে বয়স কোনো মুখ্য বিষয় নয়। এ জন্য কাউকে নিয়মিত ছাত্রও হতে হয় না। যেকোনো কৌশলে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে পারলেই নেতা হওয়া যায়।
তবে ছাত্রশিবিরের গঠনতন্ত্রে বলা আছে, ‘কোনো সদস্যের ছাত্রজীবন সমাপ্ত হলে, পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার দুই মাস পর তাঁর সদস্যপদ আপনা-আপনি বিলুপ্ত হবে।’
শিবিরের গত চারবারের সভাপতির ক্ষেত্রে দেখা গেছে, নিয়মিত ছাত্রত্ব শেষ করেও নানা কৌশলে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখেন। শিবিরের বর্তমান সভাপতি মো. রেজাউল করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামি স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন ২০০৪ সালে। এই হিসাবে তাঁর বয়স অন্তত ৩১ বছর। পাঁচ বছর ধরে তিনি পিএইচডি করছেন। সেক্রেটারি আবদুল্লাহ্ আল মামুন চৌধুরী এমবিবিএস পাস করেছেন ২০০৮ সালে। তিনি এফসিপিএস পার্ট-১ শেষ করেছেন। সাংগঠনিক কাজের জন্য তাঁর পড়ালেখা বন্ধ আছে।
২০০৮ সালের শিবিরের সভাপতি জাহিদুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপান স্টাডিজ কোর্সে ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়ে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখেন। আগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করে পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। এরও আগেরজন সেলিম উদ্দিন সিলেটের এমসি কলেজ থেকে মাস্টার্স করে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তবে তিনি আইন চর্চা করেন না।
জাহিদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাপানি স্টাডিজে ডিপ্লোমা করার সময় যে কোর্সগুলো পড়েছিলেন, সেটা থেকেই নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হওয়ার আগ্রহ জন্মেছিল। এই কোর্স শেষ হওয়ার পরই তিনি তাঁর একাডেমিক জ্ঞানগুলো কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন।
‘আপনি আর আপনার সভাপতি তো নিয়মিত ছাত্র নন?’—এর জবাবে শিবিরের সেক্রেটারি আবদুল্লাহ্ আল মামুন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিয়মিত ছাত্রের সংজ্ঞা আপনি কীভাবে দেবেন? পয়েন্টটা (মূল বিষয়) হচ্ছে, সর্বশেষ পরীক্ষা কবে হয়েছে। কেউ যদি বলে এফসিপিএস-১-এর পর আর পড়বে না, তাহলে তার জন্য এটাই সর্বশেষ পরীক্ষা। আর যদি সে পার্ট-২ করে, তাহলে তার সর্বশেষ পরীক্ষা আরও পরে হবে। এ ক্ষেত্রেও আমাদের কার্যকরী পরিষদের সিদ্ধান্তই মুখ্য।’
সংগঠনের সেক্রেটারি স্বীকার করেছেন, নেতৃত্বের জন্য কত বয়স লাগবে, সে বিষয়ে তাঁদের কোনো নিয়ম নেই। তিনি বলেন, ‘আমাদের গঠনতন্ত্র সংক্ষিপ্ত। বিস্তারিত অনেক কিছু বলা নেই। কার্যকরী পরিষদই সব সিদ্ধান্ত নেয়।’
বর্তমান সভাপতির কী অবস্থা: ২০০৪ সালে মাস্টার্স পাস করার পর শিবিরের বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক আসাদুজ্জামানের অধীনে পিএইচডি করছেন। রেজাউল করিম জানান, তিনি ২০০৫ সাল থেকে পিএইচডি শুরু করেছেন। অর্থাত্ পাঁচ বছরেও তিনি তা শেষ করতে পারেননি।
বিয়ে করেও ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে থাকা যায়। এ বিষয়েও গঠনতন্ত্রে কিছু বলা নেই। রেজাউল করিম বিবাহিত বলে সংগঠনের সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। সংগঠনের একজন নেতা বলেন, ‘বিয়ের ব্যাপারে আমাদের ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো বক্তব্য নেই। তবে, ছাত্রজীবনে বিয়ে না করাটা ভালো।’
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় শিবির: যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের আরও তিন সংগঠন—হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী, আল হারামাইন ফাউন্ডেশন, জামাআতুল মুজাহিদীনের নামও আছে এই তালিকায়। তিনটি সংগঠনই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির ওয়েবসাইটে ছাত্রশিবির সম্পর্কে বলা আছে, ছাত্রশিবির নিশ্চিতভাবেই একটি জঙ্গি সংগঠন। দেশের অন্য সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের সম্পর্ক আছে। অভিযোগ আছে, হরকাতুল জিহাদ, জামাআতুল মুজাহিদীনের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য সংগ্রহের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহূত হয়। দেশের বাইরে তালেবান, আল-কায়েদার মতো সংগঠনগুলোর সঙ্গেও ছাত্রশিবিরের সম্পর্ক আছে।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে শিবিরের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাংলাদেশের একটি ছাত্রসংগঠনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাষ্ট্রীয় সংস্থার কী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে জানতে চাইলে শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘এটা যুক্তরাষ্ট্রকেই জিজ্ঞেস করুন।’
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন