নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১০-০২-২০১০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্ত করতে ছাত্রশিবিরকেই পরামর্শ দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বলেছেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাউকে দোষী বলার মতো তথ্য পাইনি। তদন্ত ছাড়া মন্তব্য করলে প্রকৃত দোষীরা আড়ালে থেকে যায়।’
আজ বুধবার বিকেলে বড় মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। জবাবে মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা তো আর একটা ঘটনা ঘটলেই কাউকে দোষী বলতে পারি না। রাতে ঘটনা ঘটেছে। অন্ধ ধারণা থেকে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
‘ছাত্রশিবিরকে পরামর্শ দিয়েছি, তোমরা সাংগঠনিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করো। তারা তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। মহানগর (ঢাকা মহানগর) জামায়াতের আমিরকেও বলেছি তদন্ত করতে। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, তদন্তে যে-ই দোষী সাব্যস্ত হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’—অন্য একটি প্রশ্নের জবাবে বলেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।
যে ঘটনায় হত্যার অভিযোগ ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে, সে ঘটনায় ছাত্রশিবির কেন তদন্ত করবে—জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘এটা সাংগঠনিক বিষয়। সংগঠনের যদি কেউ বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।...কোনো সংগঠনের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করা। সে তদন্তের ভিত্তিতে তো আর মামলা হবে না। মামলা হবে সরকারি তদন্তের ভিত্তিতে। যদি সরকারি তদন্তে কেউ নির্দোষ প্রমাণ হয় এবং শিবিরের তদন্তে সে দোষী প্রমাণ হয়, তাহলেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
লিখিত বক্তব্যে মুজাহিদ বলেন, জামায়াত কখনো হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। একটি বিশেষ মহল ও তাদের সমর্থক কিছু মিডিয়া অব্যাহতভাবে জামায়াত ও তার নেতাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাধ্যমে ভয়ংকর তথ্যসন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। গত রোববার রাজশাহীতে সমাবেশে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য দেননি বলেও তিনি দাবি করেন। লিখিত বক্তব্যের পর মুজাহিদকে নানা প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে আজ দেশের প্রধান দৈনিকগুলোতে ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে নানা সংবাদ এসেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা অভিযোগগুলোকে গুরুত্ব দিচ্ছি, তবে ছাত্রশিবিরের বক্তব্যও দেখছি।’
যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ছাত্রশিবিরকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘বাইরের কোনো দেশের কোনো গোয়েন্দা সংস্থা কী প্রতিবেদন দিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে বিপক্ষ শক্তিগুলোর সমর্থকদের পায়ের রগ কাটার দীর্ঘদিনের পুরোনো অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি বলেন, ‘রগ কাটা রাজনীতির কথা। আমাদের আমির সংসদে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, জামায়াত-শিবির রগ কাটে, এটা কেউ প্রমাণ দিতে পারলে তিনি মেনে নেবেন। এবারের ঘটনা আমরা তদন্ত করছি। আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি। রগ কাটা একটি নিষ্ঠুর কাজ। যে-ই এই কাজ করুক, শাস্তি পাওয়া উচিত।’
যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁরা বলেছেন, ছাত্রশিবিরের কর্মীরা তাঁদের রগ কেটেছে। এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, তদন্ত কমিটি হলে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য দেবেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রশিবির উপস্থিত ছিল কি না, জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘আমাদের কাছে যে খবর আছে, যে রুমে ছাত্রলীগের দুজন গিয়েছিল সেই রুমের বাসিন্দা তাঁরা নন। এই রুম শিবিরের একজনের। ওখানে ছাত্রলীগ ছিল, শিবিরও ছিল। এখন কোনোভাবেই কাউকে দোষী বা নির্দোষ বলাটা নৈতিক মনে করছি না।’
সচেতন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আপনি কি মনে করেন না যে শিবির এই ঘটনায় জড়িত?—জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘আমি মন্তব্য করতে চাই না। তদন্ত কমিটি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক। এটাই আমরা চাচ্ছি।’
যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁরা বলেছেন, ছাত্রশিবিরের কর্মীরাই আক্রমণ করেছে—এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘তারা তো দলীয় কর্মী। আপনারা ছাত্রলীগেরটা বিশ্বাস করবেন, ছাত্রশিবিরেরটা বিশ্বাস করবেন না—এটা তো হবে না।’
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন