26 February 2010

শিবিরের দুই নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারঃ ‘ফারুককে হত্যার পর রাতেই লাশ ম্যানহোলে ফেলা হয়’




| তারিখ: ২৭-০২-২০১০


নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যার পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা লাশ ধরাধরি করে ম্যানহোলে ফেলে দেন। এ সময় ছাত্রশিবিরের ১০-১২ জন নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ফারুক হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাইজুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা জানিয়েছেন। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়া আহসান গতকাল শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে এ কথা জানান।

রাইজুলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের চৌধুরীবাড়ী এলাকা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গ্রেপ্তার করে। তিনি ফারুক হত্যার ঘটনায় রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। এদিকে র্যাব-৫-এর সদস্যরা গতকাল বিকেলে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম থেকে ওই হত্যা মামলার আরেক আসামি গিয়াস উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেন।

র্যাব জানায়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে তাণ্ডব চালানোর পর ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন করেন। রাইজুল প্রথমে নাটোর ও পরে নারায়ণগঞ্জের চৌধুরীবাড়ীতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অবস্থান নেন। র্যাব কর্মকর্তারা তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরের সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করেন। গতকাল দুপুরে রাইজুলকে র্যাব-২-এর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় তিনি বিভিন্ন তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে রাইজুল জানান, ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে শিবিরের নেতারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল দখলের পরিকল্পনা করেন। এ জন্য তাঁরা পাঁচটি দলে বিভক্ত হন। তাঁদের সঙ্গে আশপাশের গ্রামের কিছু লোকও ছিল। পুরো তত্পরতায় নেতৃত্ব দেন শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুল আলম ওরফে গোলাপ। হল দখলে মূল ভূমিকা ছিল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেনের।

লে. কর্নেল জিয়া আহসান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রাইজুল বলেছেন, শহীদ শামসুজ্জোহা হল শাখা শিবিরের সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, সোহরাওয়ার্দী হল শাখার সভাপতি মাসুদ বিল্লাহ, মাদারবক্স হল শাখার সভাপতি, জিয়া হলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজ এবং রাইজুল নিজে হবিবুর রহমান হল দখলে নেতৃত্ব দেন। শিবিরের নেতা-কর্মীরা একসঙ্গে পাঁচটি হলে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া গোলাপের নেতৃত্বে শাহ মখদুম হল শাখার সাবেক সভাপতি আনিসুর রহমান ও বর্তমান সভাপতি আহাদ আলী, লতিফ হল শাখার সভাপতি হাসমত আলী ওরফে লিটন, আমির আলী হল শাখার সাবেক সভাপতি ইকরাম ও বর্তমান সভাপতি আরিফসহ অন্য কর্মীরা শাহ মখদুম, আমির আলী ও লতিফ হল দখল করেন।

র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জানান, ফারুক হত্যার বিবরণ দিতে গিয়ে রাইজুল বলেছেন, ঘটনার সময় ফারুক শাহ মখদুম হলের টিভি রুমে ছিলেন। গোলাপ, আহাদ ও আনিসের হামলায় তিনি মারা যান। এরপর শিবিরের কর্মীরা রাতেই তাঁর লাশ ধরাধরি করে ম্যানহোলে ফেলে দেন। ওই সময় আশপাশে পুলিশ ছিল না। রাইজুল জানান, লাশ বাইরে থাকলে পুলিশ জেনে যেতে পারে—এ চিন্তা করে তাঁরা লাশ গুম করার জন্য ম্যানহোলে ফেলেন। তিনি জানান, ছাত্রলীগ নেতাদের রগ কেটেছে বাইরে থেকে আসা লোকজন।

র্যাব কর্মকর্তারা জানান, রাইজুলের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাঁরা রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে শিবিরের ক্যাডার গিয়াসকে গ্রেপ্তার করেন।

আমাদের রাজশাহীর নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গিয়াসের বাড়ি রাজশাহী মহানগরের ডাঁশমারী এলাকায়। তাঁর বাবার নাম বাবু মণ্ডল। ফারুক হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন। তিনি বাঘার উপজেলার মনিগ্রামে আত্মগোপন করে ছিলেন। বিকেলে সেখান থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে মতিহার থানায় হস্তান্তর করা হয়।

র্যাবের মহাপরিচালক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জড়িত ছাত্রশিবিরের পলাতক নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে সারা দেশে র্যাব কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের কাছে এ-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন