10 February 2010

রগ কেটে দেওয়া ফিরোজ ও সাইফুর মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১১-০২-২০১০

‘রগ কেটে দেওয়ার পর ফিরোজ রাস্তার পাশে পড়ে ছিল। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স আনতে পুলিশের সাহায্য চাই আমরা। পুলিশ আমাদের সাহায্য না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এমন পুলিশ আমরা চাই না।’

গতকাল বুধবার রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) প্রথম আলোর কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে এমন কথা বললেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মামুনুর রশিদ। তিনি ছাত্রশিবিরের হামলায় আহত ছাত্রলীগের কর্মী ফিরোজ মো. আরিফুজ্জামানের সতীর্থ। ছাত্রলীগের আহত দুই কর্মী ফিরোজ মো. আরিফুজ্জামান ও সাইফুর রহমানকে গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গভীর রাতে তাঁদের রাজশাহী থেকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় আনা হয়। গত সোমবার গভীর রাতে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা ফিরোজের দুই পা ও এক হাতের রগ এবং সাইফুরের দুই হাত ও এক পায়ের রগ কেটে দেন।

গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দোতলায় কেবিন ব্লকে দুটি বিছানায় শুয়ে আছেন ফিরোজ ও সাইফুর। পাশে বসা ছিলেন তাঁদের স্বজন আর সহপাঠী ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা। ফিরোজ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাংলা বিভাগে পড়ছেন একই বর্ষের সাইফুর রহমান।

ফিরোজের বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলায়। পল্লী চিকিত্সক বাবা হারুনুর রশীদ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কান্নাজড়ানো গলায় প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। মেয়েটার বয়স মাত্র পাঁচ। ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন।’ তিনি বলেন, তাঁর কারণেই ছেলের রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ। বলেন, ‘আমিও চেয়েছিলাম রাজনীতির মাধ্যমে যেন সে (ফিরোজ) নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কাজ করে।’ ফিরোজের রগ যারা কেটেছে তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রদের যেকোনো সমস্যায় ফিরোজ সবার আগে ছুটে যেত। স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে ফিরোজের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। শিবিরের চোখে এটাই ছিল তার দোষ।’ সেই ছুটে যাওয়াটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান, সে রাতে শিবিরকর্মীরা কাজের কথা বলে তাকে ডাক দেয়। তখনো সে তাদের চিনতে পারেনি।

মামুনুর রশীদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষের একপর্যায়ে আহতাবস্থায় ফিরোজকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন বন্ধু আর সহপাঠীরা। ফিরোজকে উদ্ধার করার পর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য পুলিশের সাহায্য চেয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ কোনো সাহায্যই করেনি।

শিবিরকর্মীরা সাইফুর রহমানের হাতের কব্জি প্রায় অর্ধেক কেটে ফেলেছেন। তাঁর দুই হাতই প্রায় কনুই পর্যন্ত ব্যান্ডেজ করা। রগ কেটে দেওয়ার পাশাপাশি ওর ঘাড়েও ছুরির আঘাত করেন শিবিরকর্মীরা। সাইফুরদের বাড়ি ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায়। বড় ভাই স্কুলশিক্ষক রাজিউর রহমান চুপচাপ দাঁড়িয়ে লোকজনের আসা-যাওয়া দেখছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাইফুর সবার ছোট। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনজনই শিক্ষকতা করি। আমাদের স্বপ্ন ছিল ও বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে প্রশাসক হবে। এখন জানি না কী হবে।’ তিনিও শিবিরকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

শামীম ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন রাতে হলের নিচে চিত্কার-চেঁচামেচি শুনে আমরা নিচে যাই। সাইফুরও দৌড়ে এগিয়ে যায়। আমি পেছনে পড়ে যাই। তখনো বুঝতে পারিনি ওই দৌড়ের পরই ওকে ভয়ংকর কিছু একটার মুখোমুখি হতে হবে।’ শামীম আরও বলেন, ‘পরিকল্পনা করে শিবিরের সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।’

সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী দুজনকে দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, দুজনের আঘাতই গুরুতর।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন