নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৩-০২-২০১০
দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিনকে প্রথমে ‘ভুল করে’ মোহাইমেনুল নামে তাদের কর্মী মনে করেছিল বলে দাবি করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। তবে তাদের বক্তব্য, নিহত মহিউদ্দিনও শিবিরকর্মী। জামায়াতে ইসলামীর এ ছাত্রসংগঠনের নেতারা বলছেন, মোহাইমেনুল নামে এক কর্মীকে অপহরণ করা হয়েছিল এবং সে-ই নিহত হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেছিলেন।
গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিবিরের সভাপতি রেজাউল করীম এসব দাবি করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে যে মহিউদ্দিনকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি আমাদের কর্মী। আমরা প্রথমে কনফিউজ্ড (বিভ্রান্ত) ছিলাম। তারা মোহাইমেনকেও কিডন্যাপ (অপহরণ) করেছিল। আমরা মনে করেছিলাম মোহাইমেন নিহত হয়েছে।’
নিহত মহিউদ্দিনকে মোহাইমেনুল নামে তাদের কর্মী দাবি করে বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেছিল শিবির।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন হত্যা ও আরও সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে ছাত্রশিবির তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি শিবিরের সভাপতি। বিশ্বের কোথাও তদন্ত কমিটির সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয় না—এ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটি ব্যতিক্রম বলতে পারেন। তবে এটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ তদন্ত কমিটি হবে।’
লিখিত বক্তব্যে শিবিরের সভাপতি দাবি করেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হল দখলের খায়েশ পূরণ করতে নিজের দলের কর্মী ফারুক হোসেনকে হত্যা করে তার দায়ভার শিবিরের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।’
ফারুক ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের ফলে মারা গেছেন মন্তব্য করায় সাংবাদিকেরা তদন্ত প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা জানালে শিবিরের নেতা রেজাউল করীম সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘লাশটা কে ম্যানহোলে রাখল, ছাত্রশিবিরকে কীভাবে দোষী করল। সে দিন তো শুধু হত্যার ঘটনা ঘটেনি, আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে, গ্রেপ্তার হয়েছে। কমিটি দেখবে কোথাও বাড়াবাড়ি হয়েছে কি না।’
ছাত্রলীগের কর্মীদের রগ কেটে দেওয়ার বিষয়ে শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘আমরা রগ কাটিনি।’ আক্রান্তরা নিজেরা হামলাকারীর নাম উল্লেখ করে তাদের শিবিরকর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেছে—এই মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন কারও বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তখন এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।’
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি অন্য খাতে প্রবাহিত করতেই শিবির সাম্প্রতিককালে পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটাচ্ছে কি না—জানতে চাইলে শিবির নেতা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার অন্য বিষয়। আমরা এখানে যারা আছি, তারা কেউ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল করীম বলেন, ‘কোন মন্ত্রী কী বলেছেন, তা বিবেচ্য বিষয় নয়। আমি ব্যক্তি অপরাধী হতে পারি, কিন্তু সংগঠন অপরাধী হতে পারে না। একটি ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে ফেলবেন—এটা কেমন কথা?।’
ছাত্রলীগে শিবিরের কথিত অনুপ্রবেশের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের মন্তব্যের সূত্র ধরে শিবিরের এ ধরনের কোনো কৌশল আছে কি না—জানতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফের কথা শুনে আমরা হেসেছি। তিনি কী দল পরিচালনা করেন যে, তাঁর দলে অন্য দল থেকে লোক ঢোকে?।’
শিবিরের এমন কৌশল আছে কি না—সাংবাদিকেরা আবারও তা জানতে চাইলে রেজাউল করীম জবাব দেন, ‘আমি সব কৌশল বলার জন্য তো সংবাদ সম্মেলন করি না।’
শিবিরকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একজন মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে কয়েকবার নিষিদ্ধ করা উচিত। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় জঙ্গি সংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ।’
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন