একরামুল হক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১৪-০২-২০১০
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের ছাত্র এ এ এম মহিউদ্দিন ওরফে মাসুম হত্যাকাণ্ডে তিনজন অংশ নিয়েছিল। ওই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরও দুজন ছাত্র। ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পুলিশ এখন ওই প্রত্যক্ষদর্শী দুই ছাত্রকে খুঁজছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর স্টেশনে মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে ও ইট দিয়ে থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় তিনি টিউশনি থেকে ক্যাম্পাসে ফিরতে স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী দুজন হলেন বিবিএ (ব্যবস্থাপনা) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোহাইমেনুল ইসলাম ও আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র ফয়সল। মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের পর শাটল ট্রেনে করে ফয়সল ক্যাম্পাসে চলে যান। তিনি ক্যাম্পাসে গিয়ে মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকারীদের সম্পর্কে হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. বাবুল আকতারকে জানিয়েছিলেন।
সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার প্রথম আলোকে জানান, ‘মহিউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী মোহাইমেনুল ইসলাম ও ফয়সল। বৃহস্পতিবার রাতেই ফয়সলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘাতক দলের সদস্যসংখ্যা সম্পর্কে আমরা ধারণা পেয়েছি। তিনজন যুবক মুহূর্তের মধ্যে মহিউদ্দিনকে খুন করে পালিয়ে যায়। তবে এর পর থেকে ফয়সলকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’
পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘মোহাইমেনুলকে পাওয়া গেলে মহিউদ্দিন হত্যাকারীদের সম্পর্কে আমরা সুনির্দিষ্ট ধারণা পাব বলে আশা করছি। এএসপি সার্কেলকে দেওয়া ফয়সলের তথ্যও পুলিশের তদন্তে কাজে লাগবে।’
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শহরে টিউশনি শেষে বৃহস্পতিবার রাতে ষোলশহর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন মহিউদ্দিন। সন্ত্রাসীরা স্টেশনসংলগ্ন মসজিদের সামনে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে। ওই সময় মহিউদ্দিনের পাশে ছিলেন মোহাইমেনুল ও ফয়সল। ঘটনার পর থেকে মোহাইমেনুলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁর মুঠোফোনটিও বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ।
পাঁচলাইশ থানার পুলিশ স্টেশন থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মহিউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। পুলিশ এ সময় তাঁর কাছে থাকা একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। ব্যাগে খাতা, নোটবই, ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত একটি বই ও একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের নিবন্ধন ফরম পাওয়া যায়।
বই, খাতা ও নোটবইয়ে মোইমেনুলের নাম ছিল। ফলে প্রথমে পুলিশ লাশ মোহাইমেনুলের বলে ধারণা করেছিল। পরে অবশ্য পুলিশ নিশ্চিত হয়, ব্যাগটির মালিক মোহাইমেনুল এবং নিহত যুবক হচ্ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞানের এমএর ছাত্র মহিউদ্দিন।
মোহাইমেনুলের ব্যাগে পাওয়া মোবাইল ফোনের নিবন্ধন ফরমটি বিবিএ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্রীর নামে। ওই ছাত্রী লাশ শনাক্ত করতে বৃহস্পতিবার রাতেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ছুটে যান। মোহাইমেনুল খুন হয়েছেন মনে করে তিনি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
মোহাইমেনুলের ওই সহপাঠিনী গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মোহাইমেনুলকে আমি দুই বছর ধরে চিনি। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। একটি দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ছুটে যাই। কিন্তু লাশটি মোহাইমেনুলের ছিল না বলে নিশ্চিত হয়ে আমি বাসায় চলে যাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী জানান, ‘মোহাইমেনুল কোথায় আছেন, আমি জানি না। তবে শুক্রবার দুপুরে একটি চ্যানেলে মাথায় ব্যান্ডেজ দেওয়া অবস্থায় তাঁর ছবি দেখানো হয়েছে।’ আরেক প্রশ্নের জবাবে ওই ছাত্রী জানান, ছাত্রশিবির দূরের কথা, মোহাইমেনুল কোনো রাজনীতি করতেন না। মহিউদ্দিন ও মোহাইমেনুলকে রাজনীতির সঙ্গে এভাবে জড়ানো দুঃখজনক।
খুনিদের ধরতে বিশেষ দল: মহিউদ্দিনের হত্যাকারীদের ধরতে গতকাল রাতে হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার বাবুল আকতারকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। উপপুলিশ কমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার জানান, মৌখিকভাবে এই চৌকস দলটি গঠন করা হয়েছে। এর অন্য সদস্যরা হলেন, রেলওয়ে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফ, কোতোয়ালি থানার মহসিন ও পাঁচলাইশ থানার আজিজ।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন