বিশেষ প্রতিনিধি | তারিখ: ১০-০২-২০১০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ সরকারদলীয় একাধিক সাংসদ। আজ বুধবার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে এবং রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এ দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, যারা নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ গর্তের মধ্যে পুঁতে রাখে, রগ কাটে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। বর্তমান স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে ছাত্রশিবিরের রাজনৈতিক অধিকার থাকবে কি না, সে বিষয়ে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে তাঁরা মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তাঁরা এ ব্যাপারে অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য দাবি করেন।
স্পিকার আবদুল হামিদ এ সম্পর্কে দেওয়া এক রুলিংয়ে বলেন, ‘এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংসদে বিশদভাবে অবহিত করতে হবে। আশা করি, যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে তা করা হবে। এটা করা উচিত।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংঘর্ষের ঘটনা তুলে ধরে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী রাজশাহীতে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পরই ছাত্রশিবির এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। ছাত্রশিবির নিজামীদেরই উত্তরসূরি। নিজামীই একসময় ওই সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তাঁরা আমাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে হত্যা, লুটপাট, নির্যাতন ও নারী ধর্ষণের মতো ঘৃণিত অপরাধ করেছেন। রগ কাটা, ম্যানহোলে লাশ রাখার মতো নৃশংস ঘটনা এঁরাই ঘটাতে পারেন। আজ গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায়। দেশের ১৫ কোটি মানুষ এঁদের বিরুদ্ধে। তাই সময় এসেছে এঁদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
শিবিরের রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এই সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। যারা অস্ত্র নিয়ে গুলি করে, রগ কেটে লাশ ম্যানহোলে ফেলে রাখে তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের মধ্যে আদর্শগত দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু তারা একে অপরের বন্ধু, সহযোগী বা ভাই। এই এক ভাই আরেক ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেফটি ট্যাংকে লাশ রাখবে, এটা হতে পারে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ঢাকায় কমিশনার হত্যা একই সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্থিতিশীল রাজনীতি ও গণতান্ত্রিক সরকারকে অস্থিতিশীল করতে এ ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবে, পরীক্ষা স্থগিত হবে, এটা হতে পারে না।
সরকারি দলের অপর সাংসদ ফজলে রাব্বী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘শিবিরের রগ কাটা রাজনীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের সন্ত্রাস ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির কর্তৃক ছাত্র হত্যা একই সূত্রে গাঁথা।’
ফজলে রাব্বী এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা সংসদকে অবহিত করার দাবি করে বলেন, ‘ঘটনার সময় পুলিশ সময়মতো যায়নি। মতিহার থানার ওসি সেখানে ছিলেন না। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংসদে জানাতে হবে।’
আজ ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, শামসুর রহমান, অপু উকিল, এস কে আবু বাকের, রফিকুল ইসলাম, আশরাফ আলী খান, সাধনা হালদার, আবদুল মজিদ খান প্রমুখ। আলোচনা শেষে সংসদের বৈঠক কাল বেলা তিনটা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
পাঁচটি বিল উপস্থাপন: সংসদে আজ পাঁচটি বিল উপস্থাপিত হয়। সব কটি বিলই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। বিলগুলো হলো জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বিল-২০১০, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি বিল-২০১০, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক টেকনোলজি বিল-২০১০, বাংলাদেশ ন্যাশনাল সাইন্টেফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল ডকুমেন্টশন সেন্টার (বেঞ্জডক) বিল-২০১০ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার বিল-২০১০। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বিলগুলো উপস্থাপন করেন।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন