13 February 2010

জামায়াত-শিবিরের আরও ১২৭ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার




নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৪-০২-২০১০


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার পর গ্রেপ্তার এড়াতে জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন করছেন। শিবিরের ওই সব নেতা-কর্মীকে ধরতে পুলিশ ও র্যাব সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে। গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে দুই দিনে জামায়াত-শিবিরের ২৮২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলো।

যশোরে অভিযানের সময় পুলিশ শিবিরকর্মীদের কাছ থেকে হাতবোমা উদ্ধার করেছে। রাজশাহীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় দুটি রামদা ও দুটি কিরিচ পাওয়া গেছে। পটুয়াখালীতে শিবিরের একটি ছাত্রাবাস থেকে বিপুলসংখ্যক জিহাদি বই ও লোহার পাইপ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত শুক্রবার গভীর রাত থেকে পুলিশি অভিযানে রাজধানী থেকে ৩১ জন, যশোর থেকে ৩৬, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪, রাজশাহী থেকে ১৩, পঞ্চগড় থেকে আট, বগুড়া থেকে সাত, সিরাজগঞ্জ থেকে চার, নওগাঁ থেকে তিন ও দিনাজপুর থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগকেই ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা আভাস দিয়েছেন। পুলিশের সূত্র জানায়, শিবিরের অস্ত্রবাজ নেতা-কর্মীদের ধরতে পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা তত্পরতা শুরু করেছে। শিবিরকর্মীদের একটি তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী গতকাল বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
ঢাকায় গ্রেপ্তার ৩১: ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। গ্রেপ্তার হওয়া সবাই জামায়াত-শিবিরের কর্মী। তাঁদের কাছ থেকে জিহাদি বইপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

যশোর অফিস জানায়, যশোরে গতকাল ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চারটি বোমা, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি আবদুল কাদের বেগ। প্রথমে ভোররাতে যশোরের এমএম কলেজে ভাঙচুর ও হাঙ্গামা সৃষ্টির অভিযোগে ২৯ জন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শহরের বিভিন্ন মেস ও বারান্দিপাড়ায় শিবিরের শহর শাখার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে অন্যদের আটক করা হয়।

ভোররাতে গ্রেপ্তার করা ৩৬ শিবিরকর্মীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে যশোরে ভাঙচুরের অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যক্তিমালিকানাধীন কটেজগুলো থেকে ২৪ জনকে আটক করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে কটেজগুলোতে অভিযান চালানো হয়। তবে আটক ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন কর্মচারী ও বেশ কয়েকজন সাধারণ ছাত্র রয়েছে বলে তাঁদের ঘনিষ্ঠরা সাংবাদিকদের কাছে ফোন করে দাবি করেন। হাটহাজারী পুলিশ সার্কেলের এএসপি বাবুল আকতার গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুক্রবার নগরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর দলটির অনেক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে যান। এসব নেতা-কর্মীর অনেকেই ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজগুলোতে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করছেন—এমন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। পরে ২৪ জনকে আটক করে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী খুনসহ সহিংস ঘটনার পর করা মামলায় গতকাল পুলিশ নতুন করে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

রাজশাহী মহানগরের মতিহার থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মতিহার থানা, রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে আটক জামায়াত-শিবিরের ১৩ জন কর্মীকে রাজশাহী মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন আবদুল ওহাব, আবদুস সালাম, জিয়াউর রহমান, আবদুর রশিদ, আসাদুল, আরফান আলী, জামাল উদ্দিন, কাওসার আলী, মোখলেছুর রহমান, শামসুল হক, আবদুল গফুর ও নাসির উদ্দিন। আদালত সবাইকে জেলহাজতে পাঠিয়েছেন।

পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় গতকাল শুক্রবার রাতে শিবির সন্দেহে আটজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিরা হলেন সালাউদ্দিন সুলতান, খায়রুল হাসান তুহিন, মাসুম, শাহজাহান কবির, নওরোজ পারভেজ মিলন, মাহামুদুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান ও রোকসানা। তাঁদের মধ্যে সালাউদ্দিন সুলতান শিবিরকর্মী। পুলিশ তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।
উপজেলার ফকিরগঞ্জ বাজারে রাতে একটি মাইক্রোবাসে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় তাঁদের আটক করা হয়।

বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গত শুক্রবার রাতে সরকারি আযিযুল হক কলেজে ছাত্রলীগের ওপর শিবিরের নেতা-কর্মীদের হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি হিসেবে সাত শিবিরকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন সোহেল রানা (২২), নূরুন্নবী (২১), গোলাম মোস্তফা (২৪), লেমন মিয়া (২২), মেহেদী হাসান (২১), জুয়েল হোসেন (২০) ও তাজুল ইসলাম (২২)।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পর পুলিশি অভিযান শুরু হলে বগুড়ার শিবিরনিয়ন্ত্রিত এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপন করে আছেন। পুলিশ জানায়, তাঁদের কাছেও খবর এসেছে রাজশাহীর ঘটনার সঙ্গে যুক্ত শিবিরকর্মীরা বগুড়ায় আত্মগোপন করেছেন।

গতকাল বিকেলে জামায়াত শহরের নবাববাড়ী সড়কে দলীয় কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা শেষে বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশি বাধার মুখে তা পণ্ড হয়।

উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: গতকাল উল্লাপাড়া রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে শিবিরকর্মী সন্দেহে চার ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন আবদুল্লাহ আল মামুন (বরিশাল), ইউনুছ আলী (বরিশাল), রুহুল আমিন (পাবনা) ও রফিকুল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ)।

উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সহিদুল ইসলাম জানান, আটক ব্যক্তিরা চিত্রা আন্তনগর ট্রেনে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। তাঁদের ট্রেনের কামরা থেকে আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হত্যায় জড়িত সন্দেহে নওগাঁ ডিবি পুলিশ ও থানার পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত শুক্রবার রাত আটটার দিকে ডিবি পুলিশ শহরতলির শৈলগাছি গ্রামে অভিযান চালিয়ে জনৈক আশরাফ আলী সরদারের ছেলে আবদুল্লাহ আল-মারুফকে গ্রেপ্তার করে। মারুফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের আবাসিক ছাত্র হলেও ছাত্রাবাসে না থেকে রাজশাহী মহানগরের মেহেরচণ্ডী এলাকার পদ্মা ছাত্রাবাসে থাকতেন। মারুফ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের পর দাড়ি কেটে ফেলে নওগাঁয় তাঁর গ্রামের বাড়িতে এসে অবস্থান নেন। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি দুই যুবকের নাম ইলিয়াস আলী ও আবদুল কুদ্দুস।

দিনাজপুর অফিস জানায়, সাবির হোসেন নামে এক শিবির নেতাকে দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট পৌর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জেলার ১৩টি উপজেলায় শিবিরের ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত বিভিন্ন মেসে গত শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ লাঠি, লোহার রড ও পাথর উদ্ধার করেছে পুলিশ। দিনাজপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয় খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

পুলিশ সুপার আবু কালাম সিদ্দিক জানান, সাবির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করার অভিযোগে করা মতিহার থানার চার নম্বর মামলার আসামি।

পটুয়াখালী অফিস জানায়, ছাত্রশিবিরের একটি ছাত্রাবাস থেকে বিপুলসংখ্যক জিহাদি বই ও চারটি লোহার পাইপ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রোড থেকে এসব উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী সদর থানার ওসি নরেশচন্দ্র কর্মকার। তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার পর থেকেই এই ছাত্রাবাসের শিবিরকর্মীরা পলাতক রয়েছেন।

চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রলীগের ওপর হামলার ঘটনায় আটক জামায়াত-শিবিরের নয়জন নেতা-কর্মীকে চাঁদপুরের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন