22 February 2010

ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হত্যাঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ১০ জন আটক




প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ২৩-০২-২০১০

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গতকাল সোমবার নাটোর থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। একই ঘটনায় রাজশাহী মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সিদ্দিক হোসেনকে দ্বিতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিবিরের চার কর্মীকে আটক ও ছাত্রীদের একটি আবাসিক হল থেকে বেশ কিছু জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে।

নাটোর: নাটোর সদর থানা সূত্রে জানা যায়, বিকেলের দিকে শহরের কানাইখালী মহল্লার সাহারা প্লাজার পঞ্চমতলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে গোপন সভা করার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মামুন, কলেজশিক্ষক মো. শাহজালাল, মাদ্রাসাশিক্ষক মাওলানা জাকির হোসেন, আবুল হাশেম, সদরুল উল্লাহ, বদিউজ্জামান, কামরুল ইসলাম, আবদুল হালিম, সৈয়দ আলী ও আনসার আলীকে আটক করা হয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তাঁদের আটক করা হয়েছে। তাঁরা বীমা কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয়ে ওই কার্যালয়ে গোপন সভা করছিলেন। আটক ব্যক্তিরা রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁরা সবাই জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী। বিস্তারিত পরিচয় সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

তবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নাটোরের জেলা ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম দাবি করেন, কার্যালয়ের মাসিক সমন্বয় সভা চলাকালে কিছু সন্ত্রাসী সেখানে হামলা চালায়। তাঁরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুনকে মারধর করে। থানায় খবর দিলে পুলিশ আসে। পুলিশ সন্ত্রাসীদের আটক না করে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটক করে নিয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, হামলাকারীরা স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তারা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে আমাদের জামায়াত-শিবির বানিয়েছে।

তবে নাটোর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা নেই। জামায়াতে ইসলামীর জেলা সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ও জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাছির উদ্দিন জানান, আটক ব্যক্তিদের কেউই জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত নন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন ১৯৯৫-৯৬ সালে নাটোর জেলা শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। তাঁর বাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহমদপুর গ্রামে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক এস এম এ এইচ তাকী জানান, আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁর সহকর্মী। তিনি ওই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

রাজশাহী: নগরের মতিহার থানার সহকারী কমিশনার মৃণাল কুমার ভট্টাচার্য বলেন, গতকাল রাজশাহীর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে সিদ্দিক হোসেনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুলিশ সিদ্দিক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, মতিহার থানার পুলিশ ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবন থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রশিবিরের কর্মী রাহাতকে ছাত্রলীগের কর্মীরা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। বেলা দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সামনে থেকে পুলিশ ছাত্রশিবিরের তিনজন কর্মীকে আটক করে। তাঁরা হলেন, রিয়াদ ইবনে আহাদ, আরিফুজ্জামান ও মঞ্জুর। তিনজনই আইন ও বিচার বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মঞ্জুর শহীদ শামসুজ্জোহা হলের ছাত্রশিবিরের ব্লক সভাপতি বলে জানা গেছে।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও মতিহার থানার পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেসা হলে অভিযান চালিয়ে সিঁড়ির নিচ থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ২১টি জিহাদি বই উদ্ধার করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ও মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত্র কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন ছাত্রশিবিরের চারজন কর্মীকে আটক ও জিহাদি বই উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফারুক হত্যা ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর শিবিরের হামলার প্রতিবাদে নয় দফা দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আওয়াল কবির।

সাতক্ষীরায় জামায়াত-শিবিরের আট নেতা-কর্মী রিমান্ডে: সাতক্ষীরায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামায়াত-শিবিরের আটজন নেতা-কর্মীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতক্ষীরা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুস সবুর জানান, আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে সাতক্ষীরা মুখ্য বিচারিক হাকিম এইচ এম সামছুল আরেফিন পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরের অপর ২৫ নেতা-কর্মীর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, নিজস্ব প্রতিবেক, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা, নাটোর প্রতিনিধি ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি)


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন