নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ১২-০২-২০১০
নিহত এ এ এম মহিউদ্দিন। চটগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের এমএর ছাত্র
ঢাকা ও রাজশাহীর পর এবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ষোলশহর রেলস্টেশনে তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময় তিনি স্টেশনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
নিহত ছাত্রের নাম এ এ এম মহিউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের এমএর ছাত্র। তাঁর বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়ায়। তিনি আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, চার-পাঁচজন মুখোশধারী সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পাথর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেঁতলে তাঁকে খুন করে। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ত্রাসীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
ষোলশহর রেলস্টেশনের মাস্টার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘রাত সাড়ে আটটার দিকে কিছু লোক ছোটাছুটি করছিল। মুহূর্তেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। পরে সেখানে আমি রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখি।’
পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরজু বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে মহিউদ্দিনকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কর্তব্যরত চিকিত্সকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার জেড এ মোরশেদ গতরাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মরদেহটি মহিউদ্দিনের বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের ৩৩৮ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র। টিউশনি করতে তিনি শহরে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে শিবির কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, মহিউদ্দিনের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। তা ছাড়া তাঁর ব্যাগে একটি বই ও কিছু খাতাপত্র পাওয়া গেছে।
পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) বনজ কুমার মজুমদার বলেন, রাতে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়ার আগে মহিউদ্দিনের রক্তভেজা প্যান্টের পকেট থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে। চিঠিতে মহাজোট সরকারের কাছে তাঁর প্রত্যাশার কথা উল্লেখ ছিল।
চিঠিতে লেখা ছিল, ‘বহু প্রতীক্ষার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন গত ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পূর্বে যথারীতি রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করেছে। বিএনপির দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও স্লোগানের চেয়ে আওয়ামী লীগের দিনবদলের সনদ বা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সনদকে মানুষ বেশি সমর্থন দিয়েছে।’
মহিউদ্দিনের খালু জয়নাল আবেদীন ও তাঁর সহপাঠী ফজলুল হাসান রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। এ সময় মহিউদ্দিনের অন্য আত্মীয়স্বজনও কান্নায় ভেঙে পড়েন। জয়নাল আবেদীন বলেন, মহিউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের আবাসিক ছাত্র। পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে সম্প্রতি ষোলশহরে একটি টিউশনি নিয়েছিল সে। রাতে টিউশনি শেষে ক্যাম্পাসে ফিরতে শাটল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিল।
আলাওল হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মাহমুদ মোর্শেদ গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ৩৩৮ নম্বর কক্ষ মহিউদ্দিনের নামে বরাদ্দ। তবে ওই সময় কক্ষ বন্ধ ছিল বলে প্রাধ্যক্ষ জানান।
তাঁর খালাতো ভাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র মতিউর রহমান বলেন, মহিউদ্দিন সক্রিয় রাজনীতি না করলেও ছাত্রলীগের সমর্থক ছিল। মহিউদ্দিনের বাবা মো. ফজলুল কাদের বান্দরবানের লামায় কৃষি বিভাগে কর্মরত। তিনি গতকাল রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত একটা) চট্টগ্রামে আসেননি। এ ঘটনায় মামলাও হয়নি।
ক্যাম্পাসে শিবিরের মিছিল: নিহত ছাত্রের নাম মোহাইমেনুল ইসলাম দাবি করে গতকাল রাতে শিবির বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল বের করেছে। তাঁরা দাবি করে, মোহাইমেনুল তাদের সংগঠনের কর্মী। গতকাল রাতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে তল্লাশি শুরু করে। ইউএনবি জানায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন