22 February 2010

কারণ যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ: বাংলাদেশ-পাকিস্তান শীতল সম্পর্ক

রাহীদ এজাজ | তারিখ: ২২-০২-২০১০


যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর ব্যাপারে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের বিষয়টি সামনে আসার পর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। দুই দেশের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকও হচ্ছে না। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শুরু হয়েছে দীর্ঘসূত্রতা।

অপরদিকে পাকিস্তান বিভিন্ন দেশে অবস্থিত তার মিশনগুলোকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে উদ্যোগ নিতে কাজে লাগাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তারা শরণাপন্ন হয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এ প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোর বাংলাদেশকে এ ক্ষেত্রে যেভাবে সহায়তা করার কথা ছিল, সেভাবে তারা তা করছে না।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশ্নে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার সময় তারা ইঙ্গিত দিয়েছে, বিষয়টি তাদের জন্য অস্বস্তির। ফলে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে এটি অন্তরায় হিসেবে কাজ করতে পারে। ২০০৮ সালের জুনে ইসলামাবাদ ও লাহোর সফরের সময় এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে এ প্রতিবেদকের। জুনের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছিলেন, পুরোনো এ বিষয়টি সামনে নিয়ে এলে অযথা ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। তাই এটা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।

জানা গেছে, পাকিস্তানের এমন মনোভাবের পর সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ কী, সেটা স্পষ্ট নয়; বিশেষ করে বিভিন্ন দূতাবাসকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মিশনগুলো কী করবে এবং ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভূমিকা কী হবে, সে ব্যাপারে সরকার সুনির্দিষ্টভাবে কোনো দিকনির্দেশনা দিচ্ছে না। এমনকি ঢাকা থেকে দূতাবাসগুলোকে এমন কোনো তথ্য সরবরাহ করা হয়নি, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রচারণার পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ঢাকা ও ইসলামাবাদের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, সাম্প্রতিক কালে চিঠিপত্র চালাচালিসহ যেকোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পাকিস্তান অনীহা প্রকাশ করছে। নিয়মিতভাবে খুব দ্রুত সমাধান হয়ে যায় এমন বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়েছে। ঢাকায় পাকিস্তান দূতাবাস সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে যে বিষয়গুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করে দিত, তা এখন পড়ে থাকছে মাসের পর মাস। সিদ্ধান্ত গ্রহণে দেরির কারণ জানতে চাইলে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পাল্টা প্রশ্ন করা হচ্ছে।

দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়টি উল্লেখ করে একটি সূত্র জানায়, এ রকম বৈঠক সাধারণত প্রতিবছরই একবার হয়। কিন্তু ২০০৯ সালের শেষ দিকে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ইসলামাবাদে, সেটি হয়নি। সর্বশেষ বৈঠক হয় ২০০৭ সালের আগস্টে ঢাকায়। গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার ব্যাপারে আগ্রহ থাকলেও পাকিস্তান সময় দেয়নি। বছরের শেষ দিকে এসে ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ঢাকায় যাবেন। তাঁর ওই সফরের প্রস্তুতি হিসেবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকা সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের শীর্ষ নেতাকে সফরের আমন্ত্রণ জানালে স্বাগতিক দেশের কর্মকর্তারা আমন্ত্রিত দেশ সফর করেন। সে হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবের ইসলামাবাদ যাওয়ার কথা। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি আপাতত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ বৈঠকটি হবে, তা বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলতে পারছেন না। এ বৈঠক না হওয়ায় আটকে আছে যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠকটিও।

সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা ও বৈঠক অনুষ্ঠানে সময় না দেওয়ার পাশাপাশি যুদ্ধপরাধের বিচার বন্ধেও তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত দূতাবাসকে ব্যবহার করে পাকিস্তান একদিকে বাংলাদেশকে অনানুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা প্রকাশ্যে প্রচার চালাচ্ছে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হোসেন হাক্কানি বাংলাদেশের তত্কালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের অনুরোধ জানান। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে এক সৌজন্য সাক্ষাতের সময় হাক্কানি তাঁর দেশের অবস্থান তুলে ধরেন। পাকিস্তান যে বিষয়টি নিয়ে বেশ আটঘাট বেঁধে নেমেছে, বিভিন্ন দূতাবাস থেকে তা ঢাকায় জানানো হয়েছে। কিন্তু সরকার কীভাবে তা মোকাবিলা করবে, সেটা দূতাবাসগুলোকে স্পষ্ট করছে না। পাকিস্তানে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার ইয়াসমিন মোর্শেদ দায়িত্ব পালনের সময় ঢাকার কাছে এ ব্যাপারে করণীয় জানতে চাইলেও কোনো জবাব পাননি।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন