রাজশাহী, ফেব্রুয়ারি ১৬ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- গত বছর সংঘর্ষে রাজশাহী বিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের নেতা শরীফুজ্জামান নোমানী খুনের বদলা নিতে সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হামলা এবং ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক হোসেনকে খুন করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত বছরের ১১ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মারা যান শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নোমানী।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ৮৭ দিন বন্ধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহীর প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ (রুয়েট) বিভিন্ন উ""শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়।
মঙ্গলবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৮ ফেব্র"য়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের হামলা এবং ফারুক খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মহানগর জামায়াত নেতা ও শিবিরকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই কর্মকর্তা জানান, শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ, সাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ও নগরীর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড শাখা শিবিরের সভাপতি হাফিজুর রহমান শাহীনের নেতৃত্বে তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর হামলায় চালায়।
এর মধ্যে ১১ ফেব্র"য়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থেকে শাহীনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।
হামলায় অংশ নেয় ছয় শতাধিক শিবির নেতাকর্মী। হামলায় বাইরে থেকে আসা দুই শতাধিক ক্যাডারও অংশ নেয়। এসব ক্যাডার ৭ ফেব্র"য়ারি রাজশাহীতে জামায়াতের জনসভায় যোগ দেওয়ার পর ক্যাম্পাসের আশপাশে শিবিরের আশ্রয়ে ছিল।
এর আগে মহানগর পুলিশ কমিশনার নওশের আলী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পুলিশ হেফাজতে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ভিত্তিতে হামলায় জড়িত ৫৪ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন।
এ ব্যাপারে বোয়ালিয়া থানার ওসি জসিম উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশ হেফাজতে পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদে জামায়াত নেতা আতাউর রহমান ও ১০ শিবিরকর্মীর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের আজ (মঙ্গলবার) আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
৮ ফেব্র"য়ারি দিবাগত রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন নিহত হন। পুলিশ বলেছে, শিবিরের হামলায় মারা গেছেন ফারুক।
জামায়াত নেতাসহ ১১ জন কারাগারে
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকর্মী খুন ও হামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমানকে পাঁচদিন পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বোয়ালিয়া থানা থেকে রাজশাহীর অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় হাকিম আদালতে পাঠানো হয় জামায়াত নেতা আতাউর রহমানকে।
হাকিম রুহুল আমীন তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এছাড়া আরো ১০ শিবিরকর্মীকে পুলিশ হেফাজতে পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো হয় একই আদালতের নির্দেশে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী ফারুক হোসেন নিহতের ঘটনায় ১১ ফেব্র"য়ারি নগরীর লোকনাথ স্কুলের সামনে থেকে পুলিশ মহানগর জামায়াত নেতা আতাউর রহমানকে গ্রেপ্তার করে।
ওইদিন রাতে পবা ও মোহনপুর উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ১০ শিবিরকর্মীকে।
ফারুক হত্যা, পুলিশের ওপর হামলা ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার এবং বঙ্গবন্ধু হল শাখা ছাত্রলীগকর্মীর উপর হামলার মামলায় আতাউর রহমানসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বোয়ালিয়া থানা হেফাজতে নেওয়া হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠানো শিবিরকর্মীরা হলেন- আব্দুল হক, শাহিনুল হক, খায়রুল ইসলাম, শাহিন আলম, মকবুল হোসেন, ইস্রাফিল হক, আব্দুল খালেক, মামুনুর রশিদ-১, মামুনুর রশিদ-২, ইস্রাফিল হোসেন।
এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া ২৭ শিবিরকর্মীকে পাঠানো হয়। ওইদিন লিটন নামের এক শিবিরকর্মীকে দ্বিতীয় দফায় আরো পাঁচদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়।
আরো নয় শিবিরকর্মী গ্রেপ্তার
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত আরো নয় শিবিরকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে রাজশাহীতে জামায়াত ও শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হলো।
এছাড়া সৈয়দ আমীর আলী হল থেকে একটি বিস্ফোরিত বোমার আলমত উদ্ধার করা হয়েছে।
আটককৃতরা হলেন- ঈমাম হোসেন, মিজানুর রহমান, রবিউল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, আসাদুল, রুবেল, রেজাউল করিম ও রহিম।
মতিহার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে গত ৮ ফেব্র"য়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হযেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে এই নয়জনকে আটক করা হয়।
এদের মধ্যে রাবি'র বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ঈমাম হোসেন ও মিজানুর রহমানকে সকাল সাড়ে ১০টায় ক্যাম্পাসের শহীদুল্লাহ্ কলা ভবন এলাকা থেকে ছাত্রলীগ কর্মীরা আটক করে পুলিশে দেয়। বাকিদের ক্যাম্পাসের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়।
মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে কিছু বিভাগে দু-একটি ক্লাস অনুষ্ঠিত হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল কম। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আর্মড পুলিশসহ অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
এদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সৈয়দ আমীর আলী হলের ছাত্রলীগের কর্মী রবিউল ইসলামের ১৩৩ নম্বর কক্ষ থেকে একটি বিস্ফোরিত বোমার আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রবিউল জানান, ৮ ফেব্র"য়ারি রাতে শিবিরের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা এখানে হামলা চালায় এবং কয়েকটি হাতের তৈরি বোমা নিক্ষেপ করে। তিনি ঘটনার পর থেকে হলের বাইরে অবস্থান করছিলেন। মঙ্গলবার নিজের কক্ষে গিয়ে বিস্ফোরিত বোমার আলামত ও কক্ষের বই-পুস্তকসহ বিভিন্ন আসবাবপত্রও পোড়ানো অবস্থায় দেখতে পান।
পরে পুলিশের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবিরের উপস্থিতিতে আলামত উদ্ধার করা হয়।
রাবি'র সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিভিন্ন আবাসিক হল প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের যৌথ উদ্যেগে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় আর কোন অস্ত্র বা বোমা রয়েছে কি না তা খুঁজে বের করার কাজ করছে।
সংঘর্ষ ও ছাত্রলীগকর্মী খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়টি মামলায় রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির মওলানা আতাউর রহমানসহ শতাধিক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/কিউএইচ/এমএসবি/১৯১৫ ঘ.
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন