রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ১৪-০২-২০১০
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর সশস্ত্র হামলা ও হতাহতের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আজ রোববার ছাত্রশিবিরের তিন কর্মীকে আটক করেছে মতিহার থানা পুলিশ। এদিকে ছাত্রশিবিরের পক্ষে সাফাই গাওয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকেও পুলিশ আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র ভবন থেকে ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে পুলিশ তিনজনকে আটক করে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা হলেন গ্রন্থাগার ও তথ্যব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিকুল ইসলাম, একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সবুজ মিয়া এবং ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। পুলিশ ওয়াসিম আকরামের দেহে তল্লাশি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি ভুয়া পরিচয়পত্র উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন আরও জানায়, আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার চত্বরের বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগের ওপর শিবিরের বর্বরোচিত হামলার ছবিসংবলিত পোস্টার সেঁটে দিচ্ছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় গ্রন্থাগারের কম্পিউটার অপারেটর ইকবাল হোসেন শিবিরের পক্ষে সাফাই গেয়ে ছাত্রলীগের ওই নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘শিবিরের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগানোর পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে, ছাত্রলীগ তা একসময় হাড়ে হাড়ে টের পাবে।’ ইকবাল হোসেনের এমন মন্তব্য শুনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে শিবিরের চর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিবিরের চর সন্দেহে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আওয়াল কবির ও সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাত্রশিবিরকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করাসহ ছাত্রশিবিরের চর, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা হিসেবে কাজ করে থাকেন। তাঁরা অবিলম্বে এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়, পুলিশ প্রশাসনসহ সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফাজ্জল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক ব্যক্তিদের থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিসহ হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের চর, পৃষ্ঠপোষক ও আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা রয়েছেন। আবার অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধেরও অভিযোগ রয়েছে। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ক্যাম্পাস ফাঁকা, অধিকাংশ বিভাগে ক্লাস হয়নি: গতকাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল ও আজ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের ক্লাস হয়নি। আজও ক্যাম্পাস ছিল অনেকটাই ফাঁকা। আবাসিক হলগুলোও ছিল শিক্ষার্থীশূন্য। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল।
কমিটির তদন্তকাজ শুরু: গত সোমবার রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের সশস্ত্র হামলা, হতাহত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি আজ থেকে তদন্তকাজ শুরু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কর্তৃক গত মঙ্গলবার পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক গোলাম কবির কাজ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রশিবিরের হামলার ঘটনা সম্পর্কে কারও কোনো তথ্য জানা থাকলে তা লিখিতভাবে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদে রক্ষিত বাক্সে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান। এ ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানকারীর নাম ও পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা ছাত্রলীগের কর্মী ও গণিত বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ফারুক হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করে তাঁর লাশ ম্যানহোলে ফেলে রাখেন। পাশাপাশি ওই রাতে ছাত্রশিবির সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পুলিশসহ ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতা-কর্মীকে গুরুতর আহত করে এবং তিন ছাত্রলীগের কর্মীর হাত ও পায়ের রগ কেটে দেয়।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন