14 February 2010

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আমরা চিন্তিত নই: মুজাহিদ



নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৪-০২-২০১০


‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আমরা চিন্তিত নই। কারণ, সরকারকে এ জন্য এত বেশি মিথ্যাচার করতে হবে যে জনগণের কাছে তারা ধরা পড়ে যাবে। যা করছে, সবই তো সরকার করছে।’

গতকাল রোববার বড় মগবাজারে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এ কথা বলেন। সরকার অভিযোগ করছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজকে বিঘ্নিত করার জন্য জামায়াত-শিবির পরিকল্পিতভাবে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে—এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মুজাহিদ এ কথা বলেন।

মুজাহিদ বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন জামায়াত-শিবিরকে নির্মূল করা হবে। নির্মূল মানে হচ্ছে, হত্যা করা। তিনি নির্মূল না বলে বলতে পারতেন, রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের কারণে জামায়াত-শিবিরের গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের যদি কারও কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে তাঁকে আইনের সম্মুখীন হতে হবে।

লিখিত বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কর্মী হত্যার পর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত জামায়াতের ১৭৭ জন ও ছাত্রশিবিরের ৩৫৭ জনকে ৫৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেক জায়গায় জামায়াত-শিবিরের কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের হামলায় ছাত্রলীগের কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনা জামায়াত ও শিবির তদন্ত করবে বলেছিল। তদন্তে কী পাওয়া গেছে—জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘সরকার বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি করুক, তার প্রতিবেদন দেখে আমরা আমাদের তদন্তের কথা বলব। ওই কমিটি জানতে চাইলে তাদেরকেও বলব।’

সাধারণত কোনো ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয়, কবে নাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে, সে বিষয়েও বলা হয়। জামায়াত কেন দুই বিষয়ই গোপন করছে—জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা নাম প্রকাশ করছি না। কারণ, নাম প্রকাশ হলে সরকার পরদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারে। সরকার যে গ্রেপ্তার-টেপ্তার করছে, তা বন্ধ করুক, তাহলে আমরা সাত দিনের মধ্যেই প্রতিবেদন দিয়ে দেব।’

লিখিত বক্তব্যে মুজাহিদ অভিযোগ করেন, এক শ্রেণীর গণমাধ্যম জামায়াতের বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য পরিবেশন ও তিলকে তাল করে রং ছড়িয়ে বানোয়াট তথ্য পরিবেশন করে হিংসা-বিদ্বেষের আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছে।

কোন গণমাধ্যম জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, জানতে চাইলে মুজাহিদ বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। এখানে নাম বলে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না। আজ যাঁরা বিপক্ষে লিখছেন, বিবেকের তাড়নায় ভবিষ্যতে তাঁরা সত্য লিখবেন। আর আমরা তো সব গণমাধ্যমের কথা বলি নাই।’

গত শনিবার রাতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বৈঠকসম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব পত্রিকা যে যা পারে, তাই লিখেছে। বিএনপি তার মতো আছে, আমরা আমাদের মতো আছি। সরকার যদি না থামে, তাহলে জনগণকে সাথে নিয়ে শুধু বিএনপি নয়, সবাইকে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে জিহাদি বই উদ্ধার বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, পবিত্র কোরআন এবং হাদিসে জিহাদের কথা উল্লেখ আছে। মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য এবং সওয়াবের নিয়তে এসব অধ্যয়ন করছে।’ জিহাদসম্পর্কিত বই-পুস্তক প্রকাশ করা ও অধ্যয়ন করা যে নিষিদ্ধ, তা তাঁদের জানা নেই।

এই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকেরা জানতে চান, জামায়াত জিহাদ ঘোষণা করবে কি না। জবাবে মুজাহিদ বলেন, ‘জিহাদ মানে সংগ্রাম, জিহাদ মানে অন্যায়, দুর্নীতি, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আন্দোলনের ডাক তো আমরা দিয়েছিই।’

কর্মসূচি: জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ, একুশে ফেব্রুয়ারি ও বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনাসদস্যদের স্মরণে সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচি ঘোষণা করেন মুজাহিদ। কর্মসূচির মধ্যে আছে, আগামী ১৬, ১৭, ১৮ ফেব্রুয়ারি মহানগর, জেলা, উপজেলায় সমাবেশ, ১৯ ফেব্রুয়ারি পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক, ২০ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনা, ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ভাষাশহীদদের জন্য দোয়া এবং ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় শহীদদের স্মরণে আলোচনা ও দোয়া।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন