25 January 2010

চট্টগ্রামে শিবিরের মেস থেকে অস্ত্র উদ্ধারঃ এজাহারে তথ্যের অসংগতি, মামলা দুর্বল হওয়ার শঙ্কা



একরামুল হক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ২৬-০১-২০১০

চট্টগ্রামের মিস্ত্রিপাড়ার ছাত্রশিবিরের মেস থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র, গুলি ও জিহাদি বই উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে বড় ধরনের গলদ ধরা পড়েছে। ফলে মামলার ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা মনে করছেন। মামলায় গলদের কারণে ‘সন্দেহের সুযোগ’ আসামিদের পক্ষে যাবে বলে একজন আইনজ্ঞ জানান। অবশ্য মামলার এক সপ্তাহ পর রোববার আদালতে একটি সংশোধনী প্রতিবেদন দাখিল করেন বাদী।

১৭ জানুয়ারি পুলিশ রাতভর শিবিরের মেসে অভিযান চালিয়ে চারটি রিভলবারসহ সাতটি অস্ত্র, ৩৭টি গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ডবলমুরিং থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব উল-আলম মোল্লা ১৮ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে ভুল থাকায় রোববার আবার সংশোধনী প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

এজাহারের প্রথম পৃষ্ঠার সূচনায় তিনটি এলজি ও চারটি রিভলবার উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মামলার বিস্তারিত বর্ণনায় বাদী তিনটি এলজি ও পাঁচটি রিভলবারের কথা উল্লেখ করেন। এটি মামলার বড় গলদ বলে আইন কর্মকর্তারা মনে করছেন। আবার সংশোধনী দাখিল হলে মামলা আরও দুর্বল হয়ে পড়বে, যার ফলে আসামিদের ‘সন্দেহের সুযোগ’ নেওয়ার পথ সৃষ্টি হবে।

চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) কামালউদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভুল তথ্য দিয়ে পুলিশ অস্ত্র মামলা করবে—এটা মেনে নেওয়া যায় না। ভুল তথ্যের ওপর সাত দিন ধরে এজাহারটি ছিল। সাতটি অস্ত্র গুনতে কী সাত দিন সময় লাগে? থানায় নথিভুক্ত হওয়ার আগেই এই ভুল কেন সংশোধন করা হয়নি?’ পিপি আরও বলেন, ‘এজাহারে ভুল তথ্য থাকলে আসামিরা তো সুবিধা নেবেই। আইনে আসামিরা সর্বোচ্চ সুবিধা পেয়ে থাকে।’

পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘হক ভিলায় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আমাদের কোনো কর্মকর্তা এ মামলায় ভুল তথ্য দিলে তাঁর বিরুদ্ধে গাফিলতি, অদক্ষতা ও কর্তব্য পালনে উদাসীনতার অভিযোগ আনা হবে। এর পরই আমরা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’

এজাহারে যা আছে: এজাহারের প্রথম পৃষ্ঠার ৩৮ থেকে ৪০তম লাইনে বলা হয়, ‘দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের পাকঘরের ভেতর তিনটি দেশীয় এলজি, তিনটি রিভলবার, যার দুটিতে পাকিস্তান ও একটিতে ইউএসএ লেখা আছে।’ প্রথম পৃষ্ঠার ৪২ ও ৪৩তম লাইনে বলা হয়, ‘চতুর্থতলা তল্লাশি করে উত্তর পাশের কক্ষে ওয়াশিং মেশিনের মধ্যে একটি রিভলবার পাওয়া যায়, যার গায়ে পাকিস্তান লেখা আছে।’

আবার এজাহারের দ্বিতীয় পৃষ্ঠার ১২ থেকে ১৭তম লাইনে বলা হয়, ‘উক্ত দ্বিতীয় তলার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটে তল্লাশি করে রান্নাঘরের ওপরের তাকে পাকিস্তান লেখা রিভলবার পাওয়া যায়।... উক্ত ফ্ল্যাটের পশ্চিম পাশে আবদুল্যা আল মামুন, দেলোয়ার হোসেন, আবদুল জব্বার, কাদের, নুরনবী ও আবদুল হালিম থাকতেন। তাঁরা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মী বলে জানা যায়। ১৭ জানুয়ারি রাত ১০টায় তাঁরা ঢাকা চলে যান বলে জানা যায়। ফলে তাঁরা উক্ত রিভলবার ও গুলি কক্ষে রেখেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
সংশোধনীতে যা আছে: এজাহারে ভুল তথ্য ছিল—এ কারণে ‘সংশোধন প্রসঙ্গে’ শিরোনামে রোববার একটি প্রতিবেদন মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করেন বাদী এসআই মাহবুব উল-আলম মোল্লা।
সংশোধনী প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মিস্ত্রিপাড়ার হক ভিলার দ্বিতীয় তলার উত্তর পাশের কক্ষ থেকে দেশে তৈরি তিনটি এলজি এবং দুটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কম্পিউটারে টাইপ করা এজাহারের শেষের দিকে ভুলবশত বর্ণিত দুটি রিভলবারের পরিবর্তে তিনটি রিভলবার দেখানো হয়েছে এবং একটির পরিবর্তে দুটি পাকিস্তানি তৈরি লেখা উল্লেখ করা হয়। মূলত তিনটি রিভলবারের পরিবর্তে দুটি রিভলবার হবে, যার একটিতে পাকিস্তান ও অন্যটিতে ইউএসএ হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে বাদী এসআই মাহবুবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি মুঠোফোনটি বন্ধ করে রেখেছেন।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন