একরামুল হক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ২৫-০১-২০১০
চট্টগ্রামে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতা-কর্মীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গত তিন দিন জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা ডবলমুরিং থানা ভবনে জড়ো হয়ে রিমান্ডে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে বলে পুলিশ সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুযোগ পেলেই গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতকর্মী একরামুল হক ও তাঁর ছেলে গোলাম আজম আব্বাসী পুলিশকে সামান্য তথ্য দিয়েছেন, যা যথেষ্ট নয়। গ্রেপ্তার হওয়া অন্য ১০ কর্মী যে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সেটাও স্বীকার করছে না। অথচ গ্রেপ্তারের সময় তাঁরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছিলেন, তাঁরা শিবিরকর্মী এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো বড় ভাইদের।
গত রোববার দিবাগত রাত সোয়া একটা থেকে পরদিন সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ ডবলমুরিংয়ের মিস্ত্রিপাড়ার ‘হক ভিলা’ থেকে সাতটি অস্ত্র, ৩৭টি গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, পাউডার ও জিহাদি বইসহ জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। গত বৃহস্পতিবার থেকে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে।
ইতিমধ্যে রিমান্ড শেষে পাঁচজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি সাতজনের রিমান্ড গতকাল রোববার শেষ হয়। তাঁদের গতকালই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল যাঁদের কারাগারে পাঠানো হয় তাঁরা হলেন একরামুল হক, মহিউদ্দিন, সৈয়দ আল আমিন মাহমুদ, মিজানুর রহমান, জহির উদ্দিন, রকিবুল হোসেন ও মনজুর আলম। কিন্তু রিমান্ডে পুলিশ তাঁদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো তথ্য বের করতে পারেনি।
ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মনজুরুল হক আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব সময় আত্মীয় বা দলীয় লোকজন থানায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করায় আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি হয়। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে আমি বাধ্য হয়ে তাদের দলের একজন কর্মীকে বের করে দিই।’
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আকন্দ বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ নিয়ে রিমান্ডের আসামিদের সঙ্গে তাঁদের আত্মীয়রা দেখা করতে পারেন। কিন্তু দলীয় নেতা-কর্মীও থানায় আসায় সমস্যা হয়। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনের মধ্যে ১০ জন মুখ না খুললেও উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ যে তাঁদের জিম্মা থেকে পাওয়া গেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
শিবিরের মেসে অভিযানে অংশ নেওয়া ডবলমুরিং থানার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গোলাম আজম আব্বাসী ছাড়া শিবিরের বাকি ১০ নেতা-কর্মী রিমান্ডে কোনো তথ্যই দেননি। প্রশ্ন করা হলে তাঁরা কেবল মাথা নেড়ে ‘না’ সূচক জবাব দেন। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রিমান্ড চলাকালে গত তিন দিন জামায়াত-শিবিরের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী থানার সামনে অহেতুক ভিড় করে আমাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করেন। আমরা তাঁদের কিছু বললে সেটা নিয়ে রাজনীতি হতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম দাবি করেন, ‘নির্দোষ ছেলেদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাই আমাদের নেতা-কর্মীরা থানায় ভিড় করেছেন।’ তিনি এই প্রতিবেদককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারও থানায় যাওয়া উচিত। আর আশ্চর্য রকম একটি প্রতিবেদন করে জাতিকে জানিয়ে দিন, নিরীহ ছেলেদের ধরে পুলিশ পরে অস্ত্রসহ চালান দিয়েছে।’
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন