প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ১৬-০১-২০১০
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে গতকাল শুক্রবার তিনটি কলেজে ছাত্রলীগের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পুলিশ-সাংবাদিকসহ ৭২ জন আহত হয়েছেন। আটক করা হয়েছে ২৯ জনকে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুলনা বিএল কলেজ, দিনাজপুর সরকারি কলেজ ও মেহেরপুর সরকারি কলেজে এসব সংঘর্ষ হয়। দিনাজপুর কলেজে ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
খুলনা অফিস জানায়, বিএল কলেজে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ৫৪ জন আহত হন। ১৫ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএল কলেজে স্নাতক শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে ছাত্রলীগ ও শিবির মিছিল বের করে। মিছিলে দুই পক্ষের কর্মীরা উসকানিমূলক স্লোগান দিতে থাকলে একপর্যায়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। উভয় দলের নেতা-কর্মীরা হকিস্টিক, রামদা, লোহার রড, পাইপ, লাঠি ও পিস্তল ব্যবহার করে। এ সময় গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটে বলে জানা গেছে।
দুপুর একটার দিকে পাঁচ প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ কলেজ চত্বরে ঢোকে। পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একপর্যায়ে শিবিরের কর্মীরা পিছু হটে। দুপুর দুইটার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে শিবিরের ব্যানার ও ফেস্টুনে আগুন ধরিয়ে দেন।
সাংবাদিকেরা ছবি তুলতে গেলে ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালান। প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শাহনেওয়াজ, দিগন্ত টিভির ক্যামেরাম্যান মো. নয়ন, দেশ টিভির এস এম মিলন, বাংলাভিশনের মতিউর রহমান আহত হন। তাঁরা এনটিভির প্রতিনিধি আবু তৈয়েবকে আটকে রেখে ক্যামেরা থেকে ক্যাসেট বের করে নেন।
বিএল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দোলন কুমার মিস্ত্রি অভিযোগ করেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা শেষে শিবির মিছিল বের করে। কিন্তু তারা মাঠ ও সড়কগুলো এমনভাবে দখল করে রাখে, যাতে আমাদের মিছিল যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এর প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা ছাত্রলীগের কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলিও ছোড়ে।’ তাঁর দাবি, সংঘর্ষে ছাত্রলীগের ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
ছাত্রশিবিরের কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিবিরের কর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল শেষে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হলে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। এতে শিবিরের ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হন।
কলেজের অধ্যক্ষ আহমেদ রেজা প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ ঘটনায় কলেজ বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভেতরে ঢুকতে হবে। কলেজে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশের উপকমিশনার মোস্তফা কামাল বলেন, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে ইটের আঘাতে মো. মামুন নামের একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। মুহসীন হল থেকে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ছাত্র নাকি বহিরাগত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
দিনাজপুর অফিস জানায়, দিনাজপুর সরকারি কলেজে গতকাল ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এ সময় কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ৩০টি কক্ষ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ সম্মান ও স্নাতকোত্তর শ্রেণীর সব ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে ছাত্রদের এবং আজ সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্রীদের হোস্টেল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কলেজে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, গতকাল কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা শেষে দুপুর ১২টার দিকে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে মিছিল বের করে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রশিবির মিছিল করার পর ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। দুপুর একটার দিকে মিছিলটি কলেজের বাংলা বিভাগের সামনে শিবিরের প্রচারকেন্দ্র অতিক্রম করে বিজ্ঞান ভবনের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় শিবিরের কর্মীরা পেছন থেকে ছাত্রলীগের মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে এবং লাঠি নিয়ে মিছিলটিকে ধাওয়া করে। এ সময় সংঘর্ষ বাধে।
মুসলিম হোস্টেল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নুল দাবি করেন, সংঘর্ষে তাঁদের ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। তা ছাড়া শিবিরের কর্মীরা মুসলিম হোস্টেলে নিজেদের ১৫টি কক্ষ ভাঙচুর করেছেন।
কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুমের অভিযোগ, ছাত্রলীগের মিছিল থেকে শিবিরের প্রচারকেন্দ্রে থাকা নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ছাত্রলীগ মুসলিম হলে শিবিরের কর্মীদের ১৫টি কক্ষ ভাঙচুর করে বলে তিনি দাবি করেন।
দিনাজপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলাউদ্দিন মিয়া সংঘর্ষের ঘটনাকে দুঃখজনক আখ্যায়িত করে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সম্মান ও মাস্টার্সের ক্লাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণীর ক্লাস হওয়ায় সেসব ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন সব পরীক্ষা পূর্বনির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।
দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম ইকবাল হাসান বলেন, বহিরাগতদের কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ থাকবে।
মেহেরপুর প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে গতকাল শহরের বিভিন্ন স্থানে দিনভর সংঘর্ষ হয়েছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। এ সময় জেলা জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। হামলা চালানো হয় ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রিত দুটি ছাত্রাবাসে। এ ঘটনায় পুলিশ জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতিসহ তাদের ২৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষাকেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। পরীক্ষা শেষে এর জের ধরে কলেজের বাইরে দুই সংগঠনের কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে প্রথম আলোর মেহেরপুর প্রতিনিধি তুহিন আরণ্য, আমার দেশ-এর প্রতিনিধি পলাশ খন্দকার ও দৈনিক দেশতথ্য-এর ফটোসাংবাদিক মিজানুর রহমান আহত হন। তাঁরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে ভাঙচুর করেন। শিবিরকর্মীদের একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। সাংবাদিকদের উদ্ধার করতে গিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সভাপতি মফিজুর রহমানসহ আরও তিন নেতা সামান্য আহত হন।
একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ম্যাজিস্ট্রেট অবিডিও মার্ডি উপস্থিত হলে পুলিশ শিবিরের জেলা সভাপতি ইকবাল হোসেনসহ ২৪ জন কর্মীকে আটক করে। তখন ছাত্রলীগের কর্মীরা অবস্থান পরিবর্তন করে মিছিল নিয়ে জেলা জামায়াতের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানান, শিবিরের কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় তাঁদের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বাধে। মেহেরপুর জেলা জামায়াতের আমির ছমির উদ্দিন বলেন, শিবিরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটির জের ধরে ছাত্রলীগের কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন