নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট ও সিলেট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা | তারিখ: ০৫-০১-২০১০
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি) ক্যাম্পাস আজ মঙ্গলবার ইসলামী ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষে একজন শিক্ষকসহ ২২ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, আজ সকালে ফরম পূরণ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জারি করা নতুন একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা নিয়ে ছাত্রলীগ ও শিবির সমর্থক কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এর জের ধরে সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন হলের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কর্মী শিপুল রায়কে সহপাঠী শিবির কর্মীরা মারধর করেন। খবর পেয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ থেকে এম সাইফুর রহমান ও নতুন আবাসিক হলের দিকে রওনা হন। ওই আবাসিক হলগুলোর বাসিন্দা শিবির কর্মীরাও সংগঠিত হয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নেন।
সংঘর্ষ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান নিয়ে তাঁদের শান্ত করার চেষ্টা চালান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিমে বালুচর এলাকার তালাবদ্ধ ফটক টপকে ১৫-২০ জন বহিরাগত সশস্ত্র শিবির কর্মী ক্যাম্পাসে ঢুকে ছাত্রলীগের কর্মীদের ওপর হামলা চালান। বেলা ১১টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে হামলা, পাল্টাহামলা ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহসভাপতি মো. ফখরুদ্দিনকে শিবির কর্মীরা দা দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। এ সময় তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়ে শিবির কর্মীদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কর্মী হুমায়ূন কবীর ওরফে আকাশ, ফারুক হোসেন, দীপন চন্দ্র, অপরূপ সাহা, সোহাগ রানা, মুস্তাফিজুর রহমান, তানজিম নাইম ও আল মামুনসহ ১৫ জন আহত হন। ছাত্রলীগের নেতা ফখরুদ্দিনসহ চারজনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনার পর ক্যাম্পাসে অবস্থানরত ছাত্রলীগের কর্মীরা দা, রামদা, হকিস্টিক ও লাঠিসোটা নিয়ে শিবিরের বহিরাগত কর্মীদের ধাওয়া করেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলে। ছাত্রলীগের কিছু কর্মী অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে মারধর করেন। খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার একদল পুলিশ গিয়ে মাহদী হাসান নামে একজন বহিরাগত যুবককে আটক করে।
ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান নেওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবিরের সশস্ত্র কর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে চলে যান। এ সময় ছাত্রলীগের ক্ষুব্ধ কর্মীরা শহীদ জিয়া আবাসিক হলে গিয়ে শিবিরের কর্মীদের ১২টি কক্ষের দরজা ভেঙে আসবাবপত্র তছনছ করেন। কয়েকটি কক্ষ থেকে কম্পিউটার, বিছানা ও বইপত্র বাইরে বের করে তাঁরা পুড়িয়ে ফেলেন। পুলিশ ও শিক্ষকেরা ছাত্রলীগের কর্মীদের শান্ত করেন।
ঘটনা সম্পর্কে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দুই শিক্ষার্থীর বাগিবতণ্ডার সূত্র ধরে আমাদের একজন কর্মীকে শিবিরের লোকজন মারধর করেন। এ ঘটনার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলে শিবির বহিরাগতদের নিয়ে সশস্ত্র হামলা চালায়। ছাত্রলীগের কর্মীরা বহিরাগতদের ক্যাম্পাস ছাড়া করতে প্রতিরোধে নামলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।’
ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাব্বির আহমদ দাবি করেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকসহ তাঁদের ১৩ জন কর্মীকে মারধর করেন। এতে ১৩ জন আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে তাঁরা সংগঠিত হয়েছিলেন।’
সাব্বির আহমদ তাঁর সংগঠনের আহত কর্মীদের নাম জানাননি। আহত ব্যক্তিরা কোথায় আছেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র কি না, জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী জানান, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একজন বহিরাগতকে আটক করে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখেছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদের ১৫তম ব্যাচের অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি দেখা নিয়ে দুই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়েছিল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে দুটি ছাত্রসংগঠন মারমুখী অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি জানান, ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন