রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি | তারিখ: ০৮-০৮-২০০৯
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে আসন বরাদ্দের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ক্যাডাররা ওই হলের নোটিশ বোর্ড ও আসবাব ভাঙচুর করেছে। এ সময় তারা হলের ফটকে তালা ঝুলিয়ে পুরো হল ঘেরাও করে রাখে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকেন।
পরে ওই হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ হল শাখা শিবিরের সাবেক সভাপতি নাফিউল ইসলামের কক্ষ থেকে দুটি লোহার পাইপ ও এক ব্যাগ পাথর উদ্ধার করে। আটক করা হয় নাফিউল ইসলামসহ বহিরাগত শিবির ক্যাডার আব্দুস সালামকে। পরে মুচলেকা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
জিয়াউর রহমান হল, ছাত্রলীগ ও ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে জিয়া হল শাখা শিবিরের সভাপতি মাইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বহিরাগত শতাধিক ক্যাডারকে সঙ্গে নিয়ে হলের আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে হল কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা এ সময় নতুন আসন বরাদ্দের তালিকা বাতিল করার দাবি জানান। শিক্ষক ও কর্মকর্তারা প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন করতে বললে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তাঁরা ওই হলের নোটিশ বোর্ড ও আসবাব ভাঙচুর করেন। এ সময় ওই হলে অবস্থানরত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অন্য হল থেকে শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ও ক্যাডার লোহার রড, লাঠিসোটা, ইটপাটকেল নিয়ে জিয়া হলে যায় এবং মূল ফটকে তালা দিয়ে হল ঘেরাও করে রাখে। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তারা এভাবেই ওই হল অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় হলের ভেতরে থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে দুপুর দেড়টার দিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার সাজ্জাদুর রহমান, মতিহার জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবির, নগর বিশেষ শাখার সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এ সময় পুলিশের একটি ভ্যানে করে অবরুদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে শিবির ক্যাডাররা ওই স্থান ত্যাগ করে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পাসের লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে শিবির উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
জিয়াউর রহমান হল শাখা শিবিরের সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, হলে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের উপেক্ষা করে কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের অধিক হারে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে হলের সাধারণ ছাত্ররা এর প্রতিবাদ করেছেন। এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
জিয়াউর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, মেধার ভিত্তিতেই হলে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর পরও কারও অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু শিবিরের নেতা-কর্মীরা তা না করে হলসহ ক্যাম্পাসের লেখাপড়ার সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, যারা ক্যাম্পাসের লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন