8 June 2009

কারাগারে গোলমালের চেষ্টা করছে শিবির নাছিরসহ ২০ সন্ত্রাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

সন্ত্রাসী নাছিরউদ্দিন ওরফে শিবির নাছিরসহ অন্তত ২০ সন্ত্রাসী চট্টগ্রাম কারাগারকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সমমনা সন্ত্রাসী ও জঙ্গিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া এবং নিজেদের পছন্দমাফিক কর্মকান্ড চালানোর জন্য কারাগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছেন নাছিররা। তাঁদের এসব কর্মকান্ডে বাধা দেওয়ায় গত শনিবার দুই কারারক্ষী শিবির নাছিরের হাতে নাজেহাল হন। এতে কারারক্ষীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এ পরিস্িথতিতে দুজন উপমহা-পরিদর্শক (কারা) গতকাল রোববার চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শন করেন। তাঁরা এ সময় শিবির নাছিরসহ কয়েকজন দাগি সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথা বলেন। কারাগারের সেল থেকে ফেরার পথে সাধারণ বন্দীরা দুই উপমহাপরিদর্শককে ঘিরে ধরেন। তাঁরা শিবির নাছিরসহ দাগি সন্ত্রাসীদের চট্টগ্রাম কারাগার থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। না হলে তাঁদের (সাধারণ বন্দী) দেশের অন্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেন। পরিস্িথতি দেখতে মহাপরিদর্শক (কারা) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম মকবুল হোসেন আজ সোমবার চট্টগ্রাম আসছেন বলে জানা গেছে।

কারাগার সুত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের দুর্বলতার সুযোগে শিবির নাছির ও তাঁর বাহিনীর ক্যাডাররা কারাগারেই বেপরোয়া হয়ে ওঠে। ফলে চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দীদের জন্য কারাবিধি বলতে কিছু ছিল না। কারাগারের ভেতরে রমরমা মাদক ব্যবসার পাশাপাশি এক সেল থেকে অন্য সেলে বন্দীদের অবাধ বিচরণ, কক্ষের ভেতর রান্নাবান্না, মোবাইল ফোনের ব্যবহার ও সমমনা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া নিয়মে পরিণত হয়।

চট্টগ্রাম কারাগারের জেলার মো. সোহেল রানা বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শিবির নাছিরের সঙ্গে জঙ্গি মুহাম্মদের বিভিন্ন সময় বৈঠক হয়েছে। ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার প্রধান আসামি হাফিজের সঙ্গে নাছিরের বৈঠক হতে আমি নিজে দেখেছি। ওই বৈঠকে ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি দীন মোহাম্মদ, সন্ত্রাসী ইকবাল ওরফে মেজর ইকবালসহ মোট ছয়জন উপস্িথত ছিলেন। এরপর আমি হাফিজকে ভিন্ন একটি সেলে সরিয়ে নিলে তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে বলে আমাকে জানান।’

জেলার সোহেল রানা আরও বলেন, ‘১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি ও জঙ্গিদের সঙ্গে শিবির নাছির ও তাঁর ক্যাডারদের ঘন ঘন বৈঠক এবং মাদক ব্যবসা বন্ধ করার কারণে কারাগারে অস্িথতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। আমাদের একজন কারারক্ষীর কাছ থেকে মাদক চেয়ে না পাওয়ায় শিবির নাছির শনিবার দুপুরে দুই কারারক্ষীকে নাজেহাল করে। এরপর নাছির ও তাঁর সহযোগীরা অনশনের নামে কারাগারে অস্িথতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা চালান।’

কারাগার সুত্র আরও জানায়, কারাগারে শিবির নাছিরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি বাইট্টা আলমগীর, সোলায়মান, তসলিমউদ্দিন মন্টু, আজম, এয়াকুব, শামীম, সোহেল, বাঘা শফি, গালকাটা রশিদ ও আলমগীর। এ ছাড়া পাং নাছির, ঢাকাইয়া আকবর, মেজর ইকবাল, লিটন, মনু ওরফে মনাইয়া, টিটুসহ আরও কয়েকজন শিবির নাছিরের নেতৃত্বে কারাগারে অনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল।
জেলার বলেন, ‘শিবির নাছিরের নেতৃত্বে মনাইয়া ও টিটুর মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেট আমরা ভেঙে দিয়েছি। কারাবিধি অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ।’ তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে শনিবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাপরিদর্শক ফজলুল হক ও গোলাম হায়দার গতকাল চট্টগ্রাম কারাগার পরিদর্শন করেন। তাঁরা দিনভর শনিবারের ঘটনা সম্পর্কে বন্দীদের ও কারা কর্তৃপক্ষের মতামত নেন।

গোলাম হায়দার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সাধারণ বন্দীরা কিছু বন্দীকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে চায়। আমরা তাঁদের অভিযোগ শুনেছি। কারাগারে কেউ অনৈতিক সুবিধা ভোগ করুক কিংবা কারাবিধি লঙ্ঘন হোক−এটা আমরা মানব না।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদ উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গোলমাল পাকানো বন্দীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে। তালিকা পাওয়ার পর আমরা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন