রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল বুধবার ছাত্রশিবির ক্যাডারদের হামলায় ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। গুরুতর আহত ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেনকে নগরের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ তাৎক্ষণিকভাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলায় জড়িত শিবির নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানিয়েছে। ঘটনার পর ছাত্রশিবির ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মুখোমুখি অবস্থানে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আজকের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসে মিছিল বের করে। ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনের রাস্তায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে তাদের নির্ধারিত মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির ওই পথ দিয়ে যেতে চাইলে শিবির তাদের বাধা দেয়। এ সময় উভয় দলই লাইব্রেরির সামনে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া করলে উভয় পক্ষে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আলম, নুর মোহাম্মদ ও ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে শিবির ক্যাডাররা লোহার রড, হাতুড়ি ও লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রলীগের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলায় ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন, জাহিদ আলী, উজ্জ্বল, মাসুদ, আহমদ, মামুন, দ্বীপ, রনি, জয়, শান্ত, রউফ, সাকু, সিজানসহ ২০ নেতা-কর্মী আহত হয়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রলীগের বেশ কিছু নেতা-কর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে আশ্রয় নিয়েছে, এমন খবর পেয়ে শিবির ক্যাডাররা ওই বিভাগে গিয়ে ছাত্রলীগের কাউকে না পেয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের কার্যালয়সহ শ্রেণীকক্ষের দরজা-জানালা ও আসবাব ভাঙচুর করে। ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুলিশ নিষ্কিত্র্নয় দর্শকের ভুমিকা পালন করে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানায়, হামলার ঘটনার পর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কিছু সময়ের জন্য ক্যাম্পাস ত্যাগ করলে শিবিরের বিপুলসংখ্যক ক্যাডার মিছিল বের করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্েলাগান দেয়। মিছিল শেষে শিবিরের নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। দুপুর দেড়টার দিকে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সংগঠিত হয়ে আবার ক্যাম্পাসে ঢোকে। এ সময় তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সশস্ত্র মহড়া দিতে থাকে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, প্রক্টরিয়াল বডির সব সদস্যসহ ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে উপস্িথত হয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং পরিস্িথতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।
গতকাল বেলা প্রায় তিনটার দিকে ছাত্রলীগ সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, পুলিশের উপস্িথতিতে শিবির নেতা-কর্মী ও ক্যাডাররা ছাত্রলীগের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন বলেন, জড়িতদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে ছাত্রলীগ ক্যাম্পাস থেকে শিবিরকে যেকোনো মূল্যে উৎখাত করবে।
এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা না বলে লাইন কেটে দেন। তবে শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ আলম সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা এখন মিটিং নিয়ে ব্যস্ত আছি, আপনাদের সঙ্গে পরে কথা হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ক্যাম্পাসের পরিস্িথতি শান্ত রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। পুলিশের নিষ্কিত্র্নয় থাকার ব্যাপারে অবশ্য তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
গতকাল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের হলগুলোতে একযোগে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকটি হলের শিবির নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে লোহার রড ও পাইপ উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে হামলা: রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ছাত্রশিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে বিরোধের জের ধরে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর বেপরোয়া হামলার অভিযোগ উঠেছে। জড়িত দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বর্ধিত একাডেমিক কাউন্সিলে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ছাত্রলীগের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে শিবিরও তাদের ওপর হামলা করেছে। হামলায় আহত ছাত্রলীগের ১৬ জন এবং শিবিরের পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১৬টি কক্ষ। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পুলিশি হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ মেডিকেল কলেজ শাখার উদ্যোগে গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে তারা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মাহবুব মহসীন, বোয়ালিয়া জোনের সহকারী কমিশনার হুমায়ুন কবির ও রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমানের অপসারণ দাবি করেছে। অন্যথায় তারা কলেজ অধ্যক্ষের অপসারণ চেয়েছে।
অপরদিকে ছাত্রশিবির বিকেল চারটার দিকে মহানগরের চিলিজ পার্টি পয়েন্টে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তাদের অভিযোগ, ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা করেছে।
তিন ছাত্রদল কর্মীকে মারধর: আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষা সফরের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদের মারধরের শিকার হয়েছে তিন ছাত্রদল কর্মী। বিভাগের একটি শ্রেণীকক্ষে গতকাল সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী আতিকুজ্জামানকে প্রধান করে ইতিমধ্যে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। মারধরের শিকার ছাত্রদলের কর্মীরা হলেন আতিক, রাজিব ও রোকনুজ্জামান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান বলেন, প্রায়ই বিভিন্ন ইস্যুতে ছাত্রদল কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানান, সাত দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন