2 February 2009

সালেহীসহ হত্যায় জড়িতদের বিচারের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি

ড. তাহেরের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলা থেকে শিবির নেতা সালেহী মুক্তি পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ক্ষোভের বিষয়টি আবার সামনে এসেছে এই ফেব্রুয়ারিতে। হত্যাকান্ডে জড়িতদের এবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে তারা। গত ১ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে অনুষ্ঠিত স্নরণসভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।

ভুতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মজুমদারের সভাপতিত্বে স্নরণসভায় ড. তাহেরের বর্ণাঢ্য কর্ম ও ব্যক্তিজীবন নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। বক্তব্য দেন বিভাগীয় অধ্যাপক ড. চৌধুরী সারওয়ার জাহান সজল, অধ্যাপক সুলতানুল ইসলাম, শিক্ষার্থী শাকিব, পুলিন, রাসেল প্রমুখ।

২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ড. তাহের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়ায় নিজের বাসা থেকে নিখোঁজ হন। ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি ওই বাসভবনের বাইরে সেপ্টিক ট্যাংকের ভেতরে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ড. তাহেরের ছেলে সানজিদ আলভী হিমেল ওই দিনই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে রাজশাহীর মতিহার থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আচানুল কবির ২০০৭ সালের ১৮ মার্চ রাজশাহীর মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতে ড. তাহের হত্যা মামলায় ছয়জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেন। এঁরা হলেন ড. তাহেরের বিভাগীয় সহকর্মী ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী, ড. তাহেরের বাসভবনের তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর, তাঁর বাবা আজিমুদ্দীন, জাহাঙ্গীরের ভাই ও শিবিরের কর্মী আব্দুস সালাম এবং তাঁর আত্মীয় নাজমুল।

২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ টি এম মেসবাউদ্দৌলা এই মামলার রায় দেন। এতে ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর, আব্দুস সালাম ও নাজমুলকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়। সালেহী, জাহাঙ্গীর ও আব্দুস সালামের বাবা আজিমুদ্দীনকে মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়। ড. তাহেরের পরিবার বলছে, সামর্থ্য না থাকায় তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেনি।

ড. মহিউদ্দিনসহ দন্ড পাওয়া ব্যক্তিরা বর্তমানে কারাগারে। তবে ড. মহিউদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে উচ্চ আদালতে আপিল করা হয়েছে। আর শিবির নেতা সালেহী মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন।

মামলার অভিযোগপত্রে ড. তাহের হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন অবৈধভাবে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ার চেষ্টা করলে ড. তাহের আহমেদ আপত্তি ও প্রতিবাদ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ড. তাহেরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন ড. মহিউদ্দিন।

জাহাঙ্গীর, নাজমুল ও আব্দুস সালাম আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানান, ড. মহিউদ্দিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের নেতা সালেহী তাদের কম্পিউটার, টাকা-পয়সা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ড. এস তাহের আহমেদকে হত্যা করার কাজে লাগান।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ইউনিয়নসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বলেছেন, আদালতে নাজমুল ও সালামের স্বীকারোক্তির পরও সালেহীর খালাস পাওয়ার ঘটনা বিস্নয়কর। তাঁদের অভিযোগ, শিবির সভাপতি সালেহীকে মামলা থেকে বাঁচাতে জামায়াত-শিবিরসহ তৎকালীন জোট সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত সুক্ষ্ম কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয়েছিল। তাঁরা এখন ড. তাহের হত্যা মামলার পুনঃ তদন্তসহ হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

ড. তাহেরের স্ত্রী রেশমী সুলতানা আবেগজড়িত কন্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বামী খুন হওয়ার পর আমার ২৮ বছরের সংসারের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে আমি দুটি ছেলেমেয়ে নিয়ে চরম অমানবিক জীবনযাপন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা কেউ-ই আমাদের কোনো খোঁজখবর রাখে না।’ তিনিও অবিলম্বে সালেহীসহ তাঁর স্বামীর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানান।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন