23 April 2011

সাঈদীর ছেলের মাহফিল: রাজশাহীতে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ৫০

রাজশাহী অফিস

রাজশাহীর চারঘাটে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীর তাফসির মাহফিলকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, পুলিশের লাঠিপেটা, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের ঘটনায় পুলিশসহ প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে।

চারঘাটের শলুয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে গতকাল শনিবার বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। সন্ধ্যার পরও এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছিল এবং বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন রয়েছে। এর আগে তাফসির মাহফিলস্থল ও এর আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, 'শলুয়া গ্রামবাসীর' ব্যানারে জামায়াত-শিবির গতকাল দুপুর ২টা থেকে চারঘাট উপজেলার শলুয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে 'তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের' আয়োজন করে।

মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে রাফিক বিন সাঈদীকে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা ছিল চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদের। সে অনুযায়ী গত কয়েক দিন এলাকায় পোস্টার ও মাইকিং করে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়।

সাঈদীর ছেলে মাহফিলে রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করতে পারে_এ আশঙ্কায় উপজেলা আওয়ামী লীগ গতকাল চারঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানায়। গতকাল সকাল থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা মাহফিল বন্ধ করতে তৎপরতা শুরু করেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে চারঘাট উপজেলা প্রশাসন শলুয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

এলাকায় রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ান আবদুস সামাদের নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। গতকাল দুপুর ২টা থেকে এলাকাবাসীকে শান্ত থাকতে পুলিশ মাইকিং করে। পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা গতকাল দুপুর থেকে মাহফিলের পুরো মাঠটি ঘিরে রাখেন।
এদিকে দুপুরের পর থেকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা ওই মাঠের আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে তাঁরা পুলিশের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে মাঠের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে তাঁদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ও তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। কলেজ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় উভয় পক্ষের মধ্যে চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল ছোড়ার ঘটনা। পুলিশ তাঁদের লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ আরো ব্যাপক আকার নেয়। এ সময় শলুয়া কলেজ মাঠ এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। পরে রাজশাহী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষে আহতদের পাশের পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন ডা. নেফাউর রহমান (৩৪), আবদুস সামাদ (৩২), রাকিবুল ইসলাম (২২), এরশাদ আলী (৩৫), খায়রুল ইসলাম (৩৫), শামীম হোসেন (২৮), জয়নাল আবেদিন (২২), রজব আলী (৩৪), ফজলুল ইসলাম (৩০), নূরুল হক (৪০) ও আবুল কালাম (৪০)।
মাহফিলের প্রধান অতিথি চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির সভাপতি আবু সাঈদ চাঁদ অভিযোগ করেন, এই ঘটনার জন্য পুলিশই দায়ী। তারা মুসলি্লদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

চারঘাট থানার ওসি হামিদুর রশিদ বলেন, সাঈদীর ছেলের তাফসির মাহফিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও মূলত সেটি ছিল বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক সমাবেশ। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সেটি ভঙ্গ করে সমাবেশ করার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দিলে স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর হামলা চালান। ঘটনায় ১০ জন পুলিশও আহত হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

রাজশাহীর পুলিশ সুপার এস এম রোকন উদ্দিন জানান, মুসলি্লরা প্রথমে পুলিশের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ বেধে যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখান প্রায় এক হাজার র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৫০ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন