6 November 2010

'ওদের খতম করো'-দাঁড়িয়ে থেকে নিজামীর নির্দেশ

আহমেদ উল হক রানা, পাবনা

বাঙালি হয়েও উর্দুতে সাত্তার রাজাকার চেঁচিয়ে বলল, 'ইয়ে সালা জিন্দা হ্যায়, সালেকো কুরবানি করো।' পাশে দাঁড়িয়ে পৈশাচিক এই গণহত্যা তদারক করছিলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তাঁর নির্দেশেই পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ধুলাউড়ির বধ্যভূমিতে রাজাকাররা একে একে হত্যা করে পদ্মবিলার খবির উদ্দিন, দ্বারা মিয়া, রঘুনাথপুরের চাঁদ আলী বিশ্বাস, সুজানগরের শাহজাহান আলী, মহসিন উদ্দিন, আকতার আলম, মোকছেদ মিয়াসহ আট মুক্তিযোদ্ধাকে। মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকাররা গলায় ছুরি চালালেও ভাগ্যক্রমে বেঁঁচে যাওয়া বনগ্রামের শাহজাহান আলী (৬৫) গতকাল শনিবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের কাছে এভাবে সেদিনের নৃশংস ঘটনা তুলে ধরেন।
শাহজাহান আলী জানান, ১৯৭১ সালের ২৭ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে তিনিসহ ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা আটক হন। সেনা সদস্যরা তাঁদের ধরে রাজাকারদের হাতে তুলে দেয়। রাজাকাররা তাঁদের নিয়ে আসে ধুলাউড়ি বধ্যভূমিতে। সেখানে তখন দাঁড়িয়ে ছিলেন জামায়াত নেতা (তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা) মতিউর রহমান নিজামী। নিজামী একপর্যায়ে সাত্তারসহ অন্য রাজাকারদের নির্দেশ দেন 'ওদের খতম করো'। শাহজাহান আলী আরো জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের কাউকে গুলি করে, কাউকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে রাজাকাররা। নিজের বেঁচে যাওয়ার বর্ণনা দিয়ে শাহজাহান আলী বলেন, 'প্রথমে আমার বুকে বেয়নেট চার্জ করা হয়। এরপর মাটিতে ফেলে নিজামীর নির্দেশে গলায় ছুরি চালানো হয়। রাজাকাররা আমাকে মৃত ভেবে ওই স্থান ত্যাগ করে। এদিকে খবর পেয়ে সালাম ও আফতাবের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থল থেকে আমাকে উদ্ধার করে। প্রথমে স্থানীয়ভাবে ও পরে পালিয়ে পাবনা সদর হাসপাতালে আমার চিকিৎসা করানো হয়।' এই ঘটনার পর বেঁচে যাওয়া শাহজাহান আলী স্থানীয়ভাবে পরিচিত হন 'গলাকাটা শাহজাহান' নামে। শাহাজাহান জানান, তাঁর মতো মুক্তিযোদ্ধা মাজেদ ও মোসলেমও সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন।
সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতি আজো তাড়া করে বেড়ায় মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলীকে। ৩৯ বছরে তাঁর সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র ঘৃণা। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোনো একদিন নির্বাচনী প্রচারকালে নিজামী মুখোমুখি হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধার। নিজামী তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলে তীব্র ঘৃণায় গালি দিয়ে তিনি হাত ফিরিয়ে দেন। ট্রাইব্যুনালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় নিজামীসহ সব মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীর বিচার দাবি করেন শাহজাহান আলী।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন