28 September 2010

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়: শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে ১৬ নেতা-কর্মী আহত

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সোমবার ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের সঙ্গে ছাত্রলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতি শাহীন, ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুজার গিফারী গাফফারসহ তিন পক্ষের অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত শাহীন, সাদ্দাম হোসেন হলের শিবিরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদ ও ছাত্রলীগকর্মী মিন্টুকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অন্যরা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ গতকাল রাতে সাদ্দাম হোসেন হলে তল্লাশি চালিয়ে তিন ছাত্রকে আটক করেছে।
সংঘর্ষের পর ছাত্রদল কুষ্টিয়া-খুলনা সড়ক অবরোধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ঈদের ছুটির পর গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের সামনে জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অশালীন কথাবার্তা বলতে থাকে। ছাত্রলীগের এক কর্মী এসব শুনে তাদের দলীয় টেন্টে গিয়ে জানালে উত্তেজিত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া দেয়। ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষক সমিতির অফিসসহ বিভিন্ন শিক্ষকের কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেয়। দৌড়ে পালানোর সময় ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক, সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, সহসভাপতি সোহাগ এবং কর্মী রতন, সোহেল ও আনিছ আহত হন। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে পুনরায় অনুষদ ভবনের কাছে আসে। সেখানে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের না পেয়ে পাশেই শিবিরের টেন্টে দাঁড়িয়ে থাকা নেতা-কর্মীর ওপর হামলা চালায়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহীন, সাদ্দাম হলের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদসহ কমপক্ষে ১০ জন অহত হন। গুরুতর আহত শাহীন ও মাসুদকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে এবং পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিবির সভাপতি আহত হওয়ার খবর আবাসিক হলগুলোতে পেঁৗছালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা হোসেন হলের সামনে জড়ো হতে থাকে। পরে তারা সাদ্দাম হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আবুজার গিফারী গাফফার, কর্মী মিন্টু, শফিকসহ পাঁচজন আহত হন। গুরুতর আহত মিন্টুকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে এবং পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় শিবিরের এক ক্যাডার হলের ছাদ থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলিও করে।
এদিকে সংঘর্ষের জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক প্রায় আধাঘণ্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ছাত্রদল সভাপতি ফারুক হোসেন বলেন, 'ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ওপর হামলা করে।' তবে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডাররা হামলা চালালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
কুষ্টিয়া সদরের এএসপি হালিম বলেন, 'আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে।' বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাহবুবুল আরফিন বলেন, পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট রয়েছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন