আরিফুল হক, রংপুর | তারিখ: ২৫-০৯-২০১০
রংপুর শহরে সহিংসতার ঘটনা এড়াতে প্রায় দেড় হাজার মেসের বাসিন্দাদের জীবনবৃত্তান্ত জানাতে দুই মাস আগে মেসমালিকদের ফরম দিয়েছিল পুলিশ। এক হাজারের মতো মেসমালিক এরই মধ্যে ফরম জমা দিয়েছেন। কিন্তু পাঁচ শতাধিক মেসমালিক এখনো তাঁদের ফরম জমা দেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন ওই মেসের মালিকদের চারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তাঁরা বাসিন্দাদের জীবনবৃত্তান্ত জানাননি। এতে পুরো উদ্যোগ ব্যর্থ হতে চলেছে। অন্যদিকে মেসমালিকদের ভাষ্য, পুলিশকে মেসের বাসিন্দাদের জীবনবৃত্তান্ত জানাতে তাঁরা বাধ্য নন।
পুলিশের একাধিক সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, রংপুর শহরের বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য আনুমানিক দেড় হাজার মেস রয়েছে। গত কয়েক বছরে কারমাইকেল কলেজের আশপাশ এলাকার মেসগুলো থেকে কলেজে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। কলেজকে নিয়ন্ত্রণ করতে ছাত্রশিবিরের অনেক নেতা-কর্মী এসব মেসে থাকেন এবং মেসে আধিপত্য বিস্তার করেন। অভিযোগ রয়েছে, মেসগুলোতে বিভিন্ন সময় জঙ্গিরাও আশ্রয় নেয়। মেসগুলো সন্ত্রাসমুক্ত করতে জেলা পুলিশ গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে মেসে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত জানার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য পুলিশ নিজ উদ্যোগে ফরম তৈরি করে তা মেসগুলোতে সরবরাহ করে। দুই মাস ধরে পুলিশের একটি বিশেষ শাখা এ কাজটি করছে।
পুরো কাজটি তদারক করছেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপরিদর্শক (এসআই) শরিফুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি জানান, কারমাইকেল কলেজের চারদিকে এক হাজারেরও বেশি মেস রয়েছে। এসব মেস কলেজপাড়া, দর্শনা মোড়, আশরতপুর, চকবাজার, পার্কের মোড়, মডার্ন মোড়, কেডিসি রোড, চুড়িপট্টি, খামার, কলেজ রোড, বনানীপাড়া, আদর্শপাড়া, বালাপাড়া, তাজহাট, বাবুপাড়া, স্টেশন, বাবুখা, কামারপাড়াসহ আরও কিছু এলাকায় রয়েছে। এর মধ্যে কলেজপাড়া, চকবাজার, আশরতপুর, কামারপাড়া, আদর্শপাড়া এলাকার পাঁচ শতাধিক মেসমালিক এখনো মেসে থাকা শিক্ষার্থী ও বাসিন্দাদের জীবনবৃত্তান্ত জানাননি।
এসআই শরিফুল জানান, অনেক ক্ষেত্রে মেসে থাকা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরাই মেসমালিকদের জীবনবৃত্তান্ত দিচ্ছেন না এবং তাঁদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন।
এদিকে পুলিশ জানিয়েছে, শহরের খলিফাটারী ও কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন ৩০টি মেস পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে। এর মধ্যে আছে দেলোয়ার, জামান, বীথি, আরিফ, নলেজ, ধানসিড়ি, জিম ও বাস টার্মিনাল এলাকার জেজা এম ছাত্রাবাস।
দেলোয়ার ছাত্রাবাসের মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, মেসে কারা বসবাস করছে এর হিসাব পুলিশকে জানাতে হবে কেন। নলেজ ছাত্রাবাসের মালিক নূরুল হক জানান, বাড়িতে কারা থাকছে এর তালিকা দিতে আমরা বাধ্য নই। ধানসিড়ি ছাত্রাবাসের শহীদুল ইসলামসহ অন্য ছাত্রাবাসের মালিকেরাও একই ধরনের কথা জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার (এসপি) সালেহ মোহাম্মদ তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, অপরাধীরা শিক্ষার্থী হয়ে মেসগুলোতে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া কারমাইকেল কলেজের আশপাশের অধিকাংশ মেস ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করেন। এসব মেসে কয়েক দফা অভিযান চালানো হলেও ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীদের পাওয়া যায়নি। তাঁরা এখন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শহরের বিভিন্ন মেসে অবস্থান নিয়েছেন।
এসপি সালেহ বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শহরের সার্বিক পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে এ জন্য মেসগুলোতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান জানতে একটি ফরম তৈরি করে মেসমালিকদের দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক মেসমালিক এতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এসব মেসের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হবে।
এ ব্যাপারে কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের নির্দিষ্ট কোনো মেস নেই এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণেও কোনো মেস নেই। পুলিশ প্রশাসন যদি এ কথাটি বলে থাকে তবে তা সত্যি নয়। তা ছাড়া মেসগুলোতে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই থাকে।’
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন