2 August 2010

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: মুখে কাপড় বেঁধে ভাঙচুর চালায় শিবির!

কমল দে ও রাশেদুল তুষার, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শিবিরের নেতা-কর্মীরা মুখে কাপড় বেঁধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাঙচুরের সময় বহদ্দারহাটের আট খুন মামলার আসামি শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিকসহ বেশ কয়েকজন বহিরাগত ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ঘটনাস্থলে অবস্থানকারী ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শিবির নেতারা তৌফিকসহ বহিরাগতদের উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন; তবে হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলছেন, এটি পুরোপুরি সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন; শিবিরের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, কয়েক দিন ধরে আন্দোলনকারীরা প্রকাশ্যে মিছিল-সমাবেশ করলেও গতকাল হামলা ও ভাঙচুরের সময় সবার মুখ ছিল রুমাল ও কাপড়ে ঢাকা। হাতে লাঠি ও লোহার রড নিয়ে ভাঙচুর চালানোর পর তারা হলে ফিরে যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) শফিকুল ইসলাম হামলার সঙ্গে শিবিরের সংশ্লিষ্টতার কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করে বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এর সঙ্গে কোন কোন সংগঠনের কর্মীরা জড়িত ছিল, তা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ বলেন, 'দু-তিন দিন ধরে কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র প্রথমে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের ব্যানারে ক্যাম্পাসে আন্দোলন সৃষ্টি করে; এরপর শহরে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। কিন্তু আজকে যে ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা আমরা কোনো দিন চিন্তাও করতে পারি নাই। হামলার ধরন অনেক পরিকল্পিত। কোনো ছোট দলের পক্ষে এ ধরনের পরিকল্পিত হামলা চালানো সম্ভব নয়। আমার মনে হয়, সাধারণ ছাত্রদের পাশপাশি বহিরাগতরা এখানে এসেছে।'
সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করার জন্য গত রবিবার রাতে পুলিশ কর্মকর্তারা বামপন্থী ছাত্রনেতাদের হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। ছাত্রনেতারাও অঙ্গীকার করেছিলেন, তাঁরা কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা করবেন না। তাই পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল কম। ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিবিরের নেতা-কর্মীরা বের হয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে থাকলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এসব কর্মী মুখে রুমাল ও কাপড় বেঁধে ভাঙচুর শুরু করে।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ আসাদুল হক আসাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বহদ্দারহাট এইট মার্ডার মামলার আসামি শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও শাকের সকালেই রেজিস্টার ভবনের সামনে আসে। এর পরই ভাঙচুর শুরু হলে তারা দ্রুত সেখান থেকে সরে পড়ে। আমি বুঝতে পারছি না, এই দুজন এখানে কেন এসেছিল বা পরে পালিয়ে গেল কেন।'
শিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ শামসুদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ঘটনার সঙ্গে শিবির জড়িত ছিল না। শিবিরের কোনো নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিল বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না।' মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক ও শাকের কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির নেতা মিয়া মোহাম্মদ তৌফিক একটি বেসরকারি হাসপাতাল পরিচালনা করেন। ওই হাসপাতালের কাজে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি যে প্রশাসনিক কাজে এসেছিলেন, রেজিস্টার ভবনে এর প্রমাণ রয়েছে।'
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রবাল মজুমদার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘটনায় শিবিরের জড়িত থাকার কোনো খবর আমাদের কাছে আসেনি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই আন্দোলন করছে। শিবিরের কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চলছে।'
প্রসঙ্গত, বর্ধিত বেতন-ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গত সোমবার থেকে বামধারার ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন