নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও নওগাঁ প্রতিনিধি
নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাবেক শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও সংগঠনের নওগাঁ অঞ্চলের কমান্ডার মো. হেমায়েত হোসেন ওরফে হিমুকে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে র্যাব-৫ রাজশাহীর জঙ্গি দমন সেলের সদস্যরা নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে হিমুকে গ্রেপ্তার করেন।
র্যাব জানিয়েছে, হিমু নওগাঁর রানীনগর উপজেলার আলোচিত ইদ্রিস আলী খেজুর ও আত্রাই উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শেখ ফরিদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত পলাতক আসামি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও নির্যাতন এবং বোমবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে আত্রাই ও রানীনগর থানায় চারটি মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর সম্প্রতি এলাকায় ফিরে হিমু গোপনে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা করছিল।
গতকাল দুপুরে হিমুকে রাজশাহীতে র্যাব ৫-এর সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এ সময় র্যাব ৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঈন উদ্দিন মাহমুদ চৌধুরীসহ পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
র্যাব সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ২৬ এপ্রিল বিকেলে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর হাইস্কুল মাঠে বাংলা ভাই সর্বহারাদের মাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্য সমাবেশ আহ্বান করে। সমাবেশ উপলক্ষে এক সপ্তাহ আগে থেকে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়। মাইকের ঘোষণায় জেএমবির পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা সমাবেশে আসবে তারা বাংলা ভাইয়ের সমর্থক, আর যারা আসবে না তারা সর্বহারার সমর্থক। সমাবেশস্থলে এই কারণে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ হাজির হয়। ওইদিন বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে হিমুসহ ৩০-৩৫ জন জেএমবি ক্যাডার আত্রাই উপজেলার ভুপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শেখ ফরিদকে বাড়ি থেকে ধরে সমাবেশস্থলে নিয়ে আসে। ফরিদকে উদ্দেশ্য করে হিমু জনতার সামনে বলে, 'তুমি সর্বহারাদের নেতা ও তাদের অস্ত্র প্রশিক্ষক'। শেখ ফরিদ তা অস্বীকার করলে বাংলা ভাইয়ের নির্দেশে জেএমবি ক্যাডাররা হকিস্টিক, লোহার রড ও লাঠিসোঁটা দিয়ে ফরিদকে নির্দয়ভাবে পেটায়। ফরিদের আর্তচিৎকার মাইকে শোনানো হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় ফরিদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে জেএমবির হাতে নির্যাতিত ভুপাড়া এলাকার কমর উদ্দিন মণ্ডল ১ মে আত্রাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে সিআইডি পুলিশ আসামি হিমুসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
র্যাব জানায়, বাংলা ভাই গ্রেপ্তারের পর হিমু এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় এবং বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির আদেশ কার্যকর হওয়ার পর এলাকায় ফিরে আবারও জেএমবির কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। ফরিদ হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিলের পর সে দীর্ঘদিন পলাতক ছিল। এ ছাড়াও হিমুসহ জেএমবি ক্যাডাররা ২০০৪ সালের ১৪ মে ইদ্রিস আলী খেজুরকে অপহরণ করে রানীনগর উপজেলার ভেটি দাখিল মাদরাসায় নিয়ে ছয় টুকরা করে হত্যা করে। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায়ও হিমু অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, হিমুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন