শিউলি শবনম, চট্টগ্রাম
জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক গুরু সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর একাধিক জিহাদি বই নিয়ে নিয়মিত গোপন কর্মশালা করছে ইসলামী ছাত্রশিবির। এ কার্যক্রম চলছে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলের পাঠকক্ষ দখল করে! অভিযোগ আছে, কক্ষটি সাধারণ ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত হলেও শিবিরের নিয়মিত গোপন রাজনৈতিক কর্মশালা আর নিজেদের সাংগঠনিক কার্যালয় হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। অধ্যক্ষ এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে উল্লেখ করেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পাঠকক্ষে শিবিরের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ শেখর দস্তিদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কলেজ থেকে শিবিরকে কোনো কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে হোস্টেল সুপারই ভালো বলতে পারবেন।' একটি কর্মশালার কাজে তিনি বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে জানান।
হোস্টেলকক্ষ দখল করে গোপন কার্যক্রম ও জিহাদি বই সংগ্রহের ব্যাপারে জানতে চাইলে কলেজের সোহরাওয়ার্দী হোস্টেলের তত্ত্বাবধায়ক ও উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নুরুল বাশার গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ছয় মাস আগে নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর হোস্টেলের পাঠকক্ষ থেকে শিবিরের এ রকম বেশ কিছু বই আমি সরিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু তাদের বৈঠকের ব্যাপারে এ মুহূর্তে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আজই খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।'
অনুসন্ধানে দেখা যায়, হোস্টেলের পাঠকক্ষটিতে পত্রপত্রিকা বা ছাত্রদের একাডেমিক বইয়ের পরিবর্তে সংরক্ষিত আছে 'সংবিধান', 'ধর্মপদ্ধতি', 'এসো আলোর পথে', 'সাফল্যের শর্তাবলী', 'মুক্তির পয়গাম'সহ শিবিরের গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত একাধিক বই। এ ছাড়া বইয়ের তাকে দেখা গেছে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর জিহাদি বই বলে খ্যাত 'যাকাতের হাকিকত', 'ইসলামী সমাধান', 'ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ'। গতকাল ওই কক্ষে ছাত্রশিবিরের গোপন বৈঠক হোস্টেলের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। চকবাজার ওয়ার্ড ছাত্রশিবির সভাপতির সভাপতিত্বে সভায় কলেজ শিবিরের দায়িত্বশীল ১০-১৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে এই বৈঠককে গোপন তৎপরতা নয়, নিজেদের অভ্যন্তরীণ শলাপরামর্শ হিসেবে দাবি করে শিবিরের কলেজ শাখার সভাপতি আবু নঈম মোহাম্মদ হারুন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা তিন-চার মাস আগে থেকে কোনো সাংগঠনিক প্রোগ্রাম করি না। আজ (গতকাল) যেটা হয়েছে সেটা কোনো বৈঠক না।'
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিকভাবে শিবির যখন কোণঠাসা, তখন তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তারা বেছে নিয়েছে এই সরকারি কলেজের হোস্টেলের পাঠকক্ষ। সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর সরকারিভাবে কড়াকড়ি আরোপ হওয়ার পর থেকে তারা এই গোপন মিশন নিয়ে নেমেছে।
সাধারণ ছাত্রদের দলে টানা, বায়তুলমালের টাকা আদায়, মহানগরীর রাজনীতিতে কলেজ শাখার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ কলেজে নিজেদের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চলছে তাদের এসব গোপন কার্যক্রম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজ হোস্টেলের এক ছাত্র বলেন, 'শিবির নেতারা যখন ওই রুমে আসে, তখন আমাদের বের করে দেয়। প্রায়ই তারা নিজেদের মধ্যে দলীয় সভা-কর্মশালা ইত্যাদি করে। ছাত্রদের পত্রিকা পড়ার জন্য এই কক্ষ নির্ধারিত হলেও শিবিরের নিজস্ব দলীয় বইয়ে ভরা এ কক্ষটি।'
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলেও শিবিরের একক দখলে চলছে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ। এ ছাড়া চট্টগ্রাম কলেজকে কেন্দ্র করে চকবাজার, মেডিক্যাল, দেওয়ানবাজার ও বাকলিয়া এলাকাজুড়ে আছে শিবিরের আধিপত্য।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন