মাসুদ কার্জন
ইতিহাসের বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় একাট্টা হয়েছিল দেশি-বিদেশি একাধিক জঙ্গি গোষ্ঠী। তাদের নেপথ্যে নায়ক বা মদদদাতা আছে দেশি-বিদেশি একাধিক প্রভাবশালী মহল। ওই হামলায় জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করেছিল তৎকালীন রাষ্ট্রযন্ত্রের একাংশ। চট্টগ্রাম থেকে আসা গ্রেনেডের চালানের একটি অংশ ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহারের পাশাপাশি আরেকটি অংশ পাঠানো হয়েছিল কাশ্মীরের জঙ্গিদের কাছেও। গ্রেনেড সরবরাহকারীদের একজন কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন নেতা আবদুল মজিদ বাট।
২১ আগস্ট হামলার সঙ্গে যোগসূত্র থাকতে পারে চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানেরও। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খোয়া যাওয়া গ্রেনেডগুলোই ব্যবহার করা হয়েছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। ওই সময় রহস্যজনকভাবে ২৪টি গ্রেনেড খোয়া গিয়েছিল। হামলাকারী ও মদদদাতা সবার লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তদন্ত সূত্র ও গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দি থেকে এসব বিষয় জানা গেছে।
মামলার বর্তমান তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহ্হার আকন্দ কালের কণ্ঠকে জানান, আবদুল মজিদ বাট বিদেশি, কাশ্মীরভিত্তিক একটি জঙ্গি সংগঠনের নেতা। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও ২১ আগস্ট হামলা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র মতে, হামলার মাঠপর্যায়ের তদারকি করেন হুজি নেতা মুফতি হান্নান ও উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই আরেক হুজি নেতা তাজউদ্দিন। তাজউদ্দিনই তাঁর ভাই পিন্টুর মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের অংশটির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। হামলার পর তাজউদ্দিনের ভিসা করানো, তাঁকে দেশের বাইরে পাঠানোর পুরো বিষয়টি দেখভাল করেছিলেন প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন তিন সদস্য।
আফগানিস্তানফেরত মুজাহিদীন সাবেক হুজি নেতা মাওলানা সালামের গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, দেশি ও বিদেশি জঙ্গি গোষ্ঠী ছাড়াও ২১ আগস্টের হামলায় তৎকালীন সরকারের একটি অংশের মদদ ছিল। সালামের মতে, ২১ আগস্ট ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো এসেছিল চট্টগ্রাম থেকে। ভিনদেশি জঙ্গি নেতা মজিদ বাট গ্রেনেডের চালানটি ঢাকায় আনার পর কিছু গ্রেনেড হুজি নেতা তাজউদ্দিনকে দেন। চালানের অবশিষ্ট গ্রেনেড পাঠিয়েছিলেন ভারতের কাশ্মীর মুজাহিদীনের কাছে। আবদুল মজিদ বাট পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের (ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজন্স) ঘনিষ্ঠ। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে তাঁর অবাধ যাতায়াত ছিল।
কিভাবে তৎকালীন সরকারের অংশটি হামলাকারীদের সহযোগিতা করেছিল তার বর্ণনা আছে পুলিশের কাছে দেওয়া মাওলানা সালামের জবাবন্দিতেও। সালামের দাবি, হামলার আগে মার্চ মাসে তাঁরা একটি বৈঠক করেছিলেন মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদের ভেতরে। তিনি ছাড়াও ওই বৈঠকে তাজউদ্দিন, মুফতি হান্নান ও মজিদ বাট উপস্থিত ছিলেন। তাঁর দাবি, ২১ আগস্ট হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যা করলে দেশে অশান্তি হতে পারে_ওই বৈঠকে তিনি এ প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন। উত্তরে তাজউদ্দিন বলেছিলেন, 'অসুবিধা নাই, বর্তমান সরকারের (বিএনপি-জামায়াত) পুরো সমর্থন পাব।' সালামের দাবি, হামলার আগে মুফতি হান্নানের বাসায় আরো একটি বৈঠক হয়েছিল। পরে তিনি পাকিস্তান চলে যান। দেশে আসার পর তাজউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। তাজউদ্দিন ওই সময় গোয়েন্দা সংস্থাটির অফিসেই থাকতেন। শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে না পারায় ওই সাক্ষাতে তাজউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেছিলেন, 'হামলা করে আসল কাজ হলো না; শুধু বদনাম হলো। সরকারের লোকজনও খুশি হতে পারেন নাই।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন