নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৪-০৭-২০১০
পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া ও গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করার পর তাঁরা পুলিশকে বলেছেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ ছাড়া তাঁরা এসব কাজ করেন না। তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান এসব ঘটনায় প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছেন। এ কারণেই কেন্দ্রীয় নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ ও দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীকে তাঁদের দেওয়া নির্দেশের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গতকাল শনিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম এ তথ্য জানান। এ মামলার আরেক আসামি জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁকে (নিজামী) এখনই হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে না। তিনজনকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা অসুবিধা বিধায়, সুবিধাজনক সময়ে নিজামীকে হেফাজতে নেওয়া হবে। গত বৃহস্পতিবার থেকে মুজাহিদ ও সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াত নেতাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেছে কি না—জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, জামায়াত-শিবির সাংগঠনিকভাবে সুশৃঙ্খল এবং কেন্দ্র থেকে শক্তভাবে নিয়ন্ত্রিত। তাই নেতাদের নির্দেশ ছাড়া এ ঘটনা ঘটানো হয়নি। এসব ব্যাপারে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তারা যে তথ্য দিচ্ছেন, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
এ মামলার বাইরে দুই জামায়াত নেতাকে আর কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে উপকমিশনার বলেন, ‘না’। তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ জিজ্ঞাসাবাদ করছে কি না, জানতে চাইলেও তাঁর জবাব ছিল, ‘না’। তবে তদন্ত কর্মকর্তা যদি কারও সাহায্য চান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে সহায়তা করা যেতে পারে বলে জানান উপকমিশনার। পল্টন থানার পুলিশ রিমান্ডে এনেছে কিন্তু গোয়েন্দা কার্যালয়ে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে—জানতে চাইলে তিনি বলেন, থানায় অবকাঠামোগত অসুবিধার কারণেই গোয়েন্দা কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামিদের সঙ্গে তাঁদের স্বজনেরা দেখা করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনে সে সুযোগ নেই।
রিমান্ডে আসামিদের নির্যাতন করার ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, তাঁদের কোনো নির্যাতন করা হচ্ছে না। সর্বোচ্চ পেশাদারীর সঙ্গে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পল্টন থানায় দায়ের করা পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার মামলায় জামায়াত নেতাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এই থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলার প্রতিটিতে তাঁদের প্রত্যেককে নয় দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
জামায়াতের অভিযোগ: দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তবে কী ধরনের নির্যাতন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি। এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘জেলে নেওয়াটাই এক ধরনের নির্যাতন। সেখান থেকে রিমান্ডে নিলে সেটি নির্যাতন নয়? আমি, আপনি জেলখানায় যেতে চাই না কেন? আমরা মুক্ত পরিবেশে থাকতে চাই।...তাঁদের ওপর মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।’
গতকাল সকালে বড় মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন এ টি এম আজহার।
বিষয় বিএনপি: জামায়াত নেতাদের গ্রেপ্তারের পর বিএনপি যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তাতে জামায়াত হতাশ কি না—জানতে চাইলে এ টি এম আজহার বলেন, ‘বিএনপি বলেনি যে তারা আমাদের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেবে না। ওরা বলেছে, তারা আমাদের পাশে থাকবে।’ জোটের শরিক দল হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি আশা করেছিলেন কি না—জানতে চাইলে তিনি সুস্পষ্ট জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘তারা বিবৃতি দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন। তা ছাড়া সামনেই আপনারা দেখতে পারবেন।’
কর্মসূচি: এ টি এম আজহার দলের আমির, নায়েবে আমির ও সেক্রেটারি জেনারেলের মুক্তির দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আছে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ, বুধবার সারা দেশে মানববন্ধন এবং আগামী শুক্র ও শনিবার নফল রোজা পালন।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন