নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে জামায়াতে ইসলামীর এক নেতাকে কাজি পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে ডিও (ডিমান্ড অর্ডার) লেটার দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শওকত হোসেন হিরন। একই আবেদনপত্রের সঙ্গে বিএনপির সংসদ সদস্য মজিবর রহমান সরোয়ারের দেওয়া ডিও লেটারও ছিল। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের দুই নেতার ডিও লেটারে ওই জামায়াত নেতা কাজি নির্বাচিত হয়েছেন। বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে এ নিয়োগ চূড়ান্ত করতে কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।
আলোচিত এই জামায়াত নেতা হলেন মো. সালেহ উদ্দিন। তিনি বরিশাল মহানগর জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য (রুকন), তবে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, 'আমার বড় ভাই মুলাদী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও হিজলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁর মাধ্যমেই মেয়রকে বুঝিয়ে ডিও লেটার নিয়ে সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাজি পদে আবেদন করেছি।'
ডিও লেটার দেওয়ার কথা অস্বীকার করে মেয়র শওকত হোসেন হিরন বলেন, 'আমি ওই ডিও লেটার দিইনি।' তিনি অস্বীকার করলেও নগরীর ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেত্রী কোহিনুর বেগমসহ আওয়ামী লীগ ও জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের একাধিক সূত্র সালেহ উদ্দিনকে মেয়রের ডিও লেটার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানিয়েছে, মহানগরীর ২ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাজি ও নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছর থেকে। বেশ কয়েকবার বিজ্ঞপ্তি দিয়েও নিয়োগ চূড়ান্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ চলতি বছরের ৪ এপ্রিল বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ২০ এপ্রিল ছিল আবেদনের শেষ তারিখ। বাছাই শেষে ১০ জুন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আবেদনপত্র বাছাইকালে ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী মো. সালেহ উদ্দিনের পক্ষে মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ডিও লেটার পাওয়া যায়। ২০০৯ সালের ৭ মে ওই ডিও লেটার দিয়েছিলেন মেয়র হিরন, যার ক্রমিক নম্বর ৫৩। এতে মো. সালেহ উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য মেয়র যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহানগর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য সালেহ উদ্দিন এর আগে আমানতগঞ্জ সাংগঠনিক থানার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি জামায়াতের মতাদর্শে পরিচালিত ইসলামী জীবন বীমা (তাকাফুল) রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেডের বরিশাল বিভাগের নির্বাহী মহাব্যবস্থাপক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি আমার দেশ পত্রিকার ডিক্লারেশন বাতিল ও মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর দলীয় কার্যালয়ে মহানগর জামায়াতের একটি প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে জামায়াত নেতা অ্যাডভোকেট সালেহ উদ্দিন মাসুমের পাশে থাকা তাঁর একটি স্থিরচিত্র এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।
জেলা রেজিস্ট্রার সত্য গোপাল কর্মকার ডিও লেটারের কথা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে পরীক্ষা নিয়ে তিন সদস্যের একটি প্যানেল সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। প্যানেলের দ্বিতীয় সারিতে সালেহ উদ্দিনের নাম রয়েছে। প্যানেল নির্বাচনের সময় জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিল উপস্থিত ছিলেন। এখানে আমাদের কিছু করণীয় নেই।'
এ বিষয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ কে এম মুর্তুজা আবেদীন বলেন, 'জামায়াত নেতাদের মাধ্যমে সালেহ উদ্দিন আমার কাছেও সুপারিশ করিয়েছিল।'
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন