নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ০৭-০৭-২০১০
চট্টগ্রামে আটক ১০ ট্রাক অস্ত্রের ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিজামী ওই সময় শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নিজামী বেশির ভাগ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি।
মতিউর রহমান নিজামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গত রোববার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কার্যালয়ে এর আগে থেকেই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাজতে তাঁদের রাখা হয়েছে। পল্টন থানায় দায়ের করা তিনটি মামলার প্রতিটিতে তাঁদের প্রত্যেককে নয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদিকে পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজাহারুল ইসলামসহ আটজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। চার মাসের জন্য এ জামিন মঞ্জুর করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, নিজামীর কাছে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি ওই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না বলেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমীন অস্ত্র খালাসের রাতে চট্টগ্রামের সিএফএল রেস্টহাউসে ছিলেন। নিজামীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ওই কর্মকর্তাকে সেখানে পাঠিয়েছিলেন কি না। নিজামী গোয়েন্দা পুলিশকে জানান, ওই কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সফরে গিয়ে সেখানে রাত কাটান।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিজামীর কাছে জানতে চান, চট্টগ্রাম সার কারখানার গুদাম থেকে এক হাজার ১৮২ টন রক সালফার চুরির ঘটনার তদন্ত কেন শেষ করা হয়নি। চুরি হওয়া ওই সব রক সালফার জেএমবির হাতে চলে যায়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া জেএমবির নেতা সাইদুর রহমান অনেক রক সালফার ফেলে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। নিজামী এ ব্যাপারে কোনো উত্তর দেননি।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতের নেতাদের বক্তব্য থেকে তাঁরা জানতে পেরেছেন, জামায়াতে ইসলামীতে ‘তালিম বিভাগ’ নামে একটি শাখা ছিল। এ শাখায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। ’৯০-এর পর ওই শাখার নাম বদল করে স্বাস্থ্য শাখা রাখা হয়। শাখার সদস্যরা ক্ষুদ্র অস্ত্রের প্রশিক্ষণ পান। জেএমবির নেতা সাইদুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে এ সম্পর্কে আরও তথ্য দিয়ে বলেছেন, প্রশিক্ষণ-সুবিধার জন্য এসব শাখা পাহাড়ি অঞ্চলে গড়ে তোলা হয়েছিল। গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের নেতারা জিজ্ঞাসাবাদের সময় এ বিষয়ে কোনো উত্তর দেননি বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তাঁর বিভিন্ন স্থানে দেওয়া ভাষণের রেকর্ড শোনানো হয়। ওই ভাষণে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার বিষয়টিকে সমর্থন করেছিলেন এবং হুমায়ুন আজাদকে মুরতাদ ঘোষণা করেন। নারী নেতৃত্ব নিয়েও সাঈদীকে তাঁর ভাষণের রেকর্ডও শোনানো হয়। তিনি বলেন, তিনি অত রাজনীতি বোঝেন না। লোকজন তাঁকে ভালোবেসে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, জামায়াত পরিচালিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক আয়-ব্যয় নিয়ে তথ্য দিয়েছেন জামায়াতের নেতারা। তাঁদের তথ্য অনুযায়ী জামায়াতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় হয়। এসব আয়ের একটি বড় অংশ জামায়াত ও এর অঙ্গসংগঠনের পেছনে ব্যয় হয়ে থাকে।
জামিন মঞ্জুর: পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজাহারুল ইসলামসহ আটজনের আগাম জামিন মঞ্জুর করেছেন হাইকোর্ট। চার মাসের জন্য এ জামিন মঞ্জুর করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি আফজাল হোসেন আহমেদ ও মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ তাঁদের আগাম জামিন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে কেন তাঁদের স্থায়ী জামিন দেওয়া হবে না, তা তিন সপ্তাহের মধ্যে জানতে চেয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্ট লোকজনের প্রতি রুল জারি করা হয়।
জামিন পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন—সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান, প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলম, আইনবিষয়ক সম্পাদক জসিমউদ্দিন সরকার, ঢাকা মহানগর সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম, জামায়াতের নেতা মিজানুর রহমান, ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আনিসুর রহমান ও সেক্রেটারি মো. ওবায়েদ। গতকাল আটজন আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন জানান। তাঁদের পক্ষে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, বেলায়েত হোসেন ও সরকারপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মমতাজ উদ্দিন ফকির মামলা পরিচালনা করেন।
উল্লেখ্য, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তারের সময় পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ২৯ জুন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের উপপরিদর্শক এমদাদুল হক শাহবাগ থানায় মামলাটি করেন।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন