18 July 2010

জেএমবি সক্রিয় জামাআতুল মুসলিমীন নামে

হাসানুল কাদির

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নতুন নামে দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। 'মুজাহিদীন'-এর জায়গায় 'মুসলিমীন' যোগ করে সংগঠনটির নতুন নাম করা হচ্ছে 'জামাআতুল মুসলিমীন বাংলাদেশ'। সেই সঙ্গে সংগঠনের কর্মপদ্ধতিতেও অনেক পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের বদলে এই মুহূর্তে তারা আরো বেশি কর্মী সংগ্রহ করে সংগঠনকে শক্তিশালীকরণে হাত দিয়েছে। জেএমবি-সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন_র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জামাআতুল মুসলিমীন নামে একটি সংগঠনের খবর আমরা পেয়েছি। তবে জেএমবির লোকরাই এই নামে কাজ করছে কি না, তা আমরা নিশ্চিত নই। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, আল্লাহর দল, জামাআতুল মুসলিমীন_প্রতিটি দলই সমচিন্তা লালন করে। তাদের সবার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক।

জানা গেছে, দেশ থেকে তাগুতি (প্রচলিত সরকারব্যবস্থাকে জেএমবি তাগুতি বা শয়তানি শাসন বলে উল্লেখ করে) শাসকদের উৎখাত করে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সশস্ত্র জিহাদের অংশ হিসেবে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে একযোগে সিরিজ বোমা হামলা করে জেএমবি। এরপর তারা আত্দঘাতী বোমা হামলার পথও বেছে নেয়। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে জেএমবির মজলিসে শুরার সাত সদস্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাতেও দমে যায়নি জেএমবির নাশকতামূলক তৎপরতা। জেএমবির আমির শায়খ আবদুর রহমানসহ শুরা সদস্যদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরও সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া মাওলানা সাইদুর রহমানের নেতৃত্বে আবারও বড় ধরনের হামলা পরিচালনার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে সাইদুর গ্রেপ্তার হন।

জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে নতুন করে জেএমবি যাত্রা শুরু করে শায়খ আবদুর রহমানের নেতৃত্বে। মূলত আহলে হাদিস অনুসারীদের মধ্যেই চলতে থাকে এদের কার্যক্রম। তাতে যোগ দেয় জামায়াতে ইসলামীর কিছু নেতা-কর্মীও। জেএমবিতে অন্য ইসলামী দলগুলোর নেতা-কর্মীকেও যুক্ত করার চেষ্টা করেন শায়খ রহমান। ২০০৫ সালের আগস্টে তারা দেশে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সশস্ত্র জিহাদ শুরু করে। এরপর সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার নানামুখী কৌশলের অংশ হিসেবে তারা সংগঠনের নামেও পরিবর্তন আনে। প্রথমত তারা জেএমবির নাম পাল্টে 'কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ' নামে কিছুদিন সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করে। এরপর আবারও জেএমবি নামেই ফিরে আসে। সম্প্রতি সাইদুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত জুনের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তারা নতুন নাম ঠিক করে জামাআতুল মুসলিমীন বাংলাদেশ। এই নামেই এখন কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।

আরো পরিবর্তন : কেন্দ্রীয় শুরা কমিটি ঠিক রেখে সাংগঠনিক বিভিন্ন পদেও তারা পরিবর্তন এনেছে। জেলা কমিটির প্রধানকে জেলা আমির এবং প্রতিটি জেলায় শুরা কমিটি গঠন করা হবে। এখন থেকে সশস্ত্র জিহাদের পরিবর্তে নফসের (আত্দার) জিহাদের লক্ষ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ জন্য আহলে হাদিস অনুসারী মুসলমান এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের টার্গেট করা হয়েছে। তাদের মধ্যেই মূলত জামাআতুল মুসলিমীন বাংলাদেশ নামে জেএমবি তাদের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে জিহাদ : বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতেও সশস্ত্র জিহাদের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন জেএমবির অন্যতম শুরা সদস্য। নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সরকারপ্রধান পুতুল। তাদের হাতে কোনোই ক্ষমতা নেই। তারা পরিচালিত হয় পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে আমেরিকার নির্দেশে। তাই ভবিষ্যতে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে।

তিনি বলেন, 'সরাসরি পশ্চিমা দেশগুলোতে গিয়ে জিহাদ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। বাংলাদেশে থেকেও তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা যাবে। পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাস, নাগরিক, স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তখন জিহাদের টার্গেট হবে। আমরা এই কাজটিই করতে চাই।'

এখন থেকে 'দ্বীনি ভাই' : আরো জানা গেছে, 'জিহাদি ভাই' বাদ দিয়ে এখন থেকে তারা 'দ্বীনি ভাই' তৈরি করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জিহাদি ভাই তৈরি করার টার্গেট নিয়ে অনেক কাজ করলেও তারা সাড়া পায় না। নতুন সদস্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে জিহাদের কথা বললেই সন্দেহ শুরু হয়। ফলে নতুন কর্মী সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার আগেই তারা যতটুকু সম্ভব সদস্য সংগ্রহ করতে পেরেছে। এরপর অনেক চেষ্টা করেও আর নতুন সদস্য পাওয়া যায়নি।

মাত্র ৫০০ জেএমবি : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৫ সালে সিরিজ বোমা হামলার সময় জেএমবির ৬৪ জেলায় শুরা কমিটি ছিল। ছিল এহসার সদস্যও। এদের সংখ্যা ছিল সারা দেশে ১০ হাজারের কিছু বেশি। কমতে কমতে সেই সংখ্যা এখন ৫০০-এর কোটায় এসেছে। সদস্যদের তিন-চতুর্থাংশই জেএমবি ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। বাকি অনেকেই কারাবন্দি।

ঢাকা, রাজশাহী, সিলেটেই সীমাবদ্ধ : অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশে এখন আর জেএমবির কার্যক্রম নেই। ঢাকা ও সিলেটে কিছু জনবল থাকলেও এখনো জেএমবির মূল কার্যক্রম চলছে রাজশাহীতেই। এর বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর ও বরিশাল বিভাগে কোনো কমিটিও নেই। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে শুধু কুমিল্লায় একটি কমিটি আছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন