নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি
বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে একযোগে বোমা হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এই 'মিশন' সফল করতে জেএমবির 'স্পেশাল কমান্ডো' হিসেবে পরিচিত বর্তমান সাংগঠনিক প্রধান আনোয়ার আলম খোকা ওরফে ভাগ্নে শহীদকে এক হাজার শক্তিশালী বোমা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বোমা তৈরির জন্য নিরাপদ এবং উপযুক্ত স্থান হিসেবে তারা বেছে নিয়েছিল বগুড়া জেলাকে। কিন্তু দলের কয়েকজন বিশ্বাসঘাতকতা করায় শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। বগুড়ায় গ্রেপ্তার করা ভাগ্নে শহীদ জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়ে বলেছে, তাদের বোমা হামলার ধরন হতো আফগানিস্তানের মতো। ইসলাম মানে না এমন মানুষই হতো তাদের মূল লক্ষ্য।
পুলিশ সুপার জানান, জেএমবির আমির (বর্তমানে কারাগারে) মাওলানা সাইদুরের নির্দেশে শহীদ বগুড়া শহরের উপশহর এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া করে। সেখানে চার সহযোগীকে নিয়ে থাকত সে। এক হাজার শক্তিশালী বোমা তৈরির জন্য উচ্চক্ষমতার বিস্ফোরক, ডেটোনেটরসহ নানা সরঞ্জাম তারা বগুড়া শহরের ওই বাড়িতে জড়ো করেছিল। বেশ কিছু বোমা তৈরিও করেছিল। কিন্তু মাওলানা সাইদুরের নির্দেশেই আবার হামলার পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। রাজশাহী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও বগুড়া জেলার দায়িত্বে থাকা দলের চার সদস্য বিশ্বাসঘাতকতা করায় ওই মুহূর্তে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা নিরাপদ হবে বলে মনে করেনি সে।
জিজ্ঞাসাবাদে ভাগ্নে শহীদ পুলিশকে জানিয়েছে, তাদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সারা দেশে অন্তত পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেত। তাদের প্রধান টার্গেটে ছিল বিভিন্ন এনজিও ও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর সরকারি দপ্তরে হামলা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। বগুড়ার পুলিশ সুপার জানান, ভাগ্নে শহীদ রিমান্ডে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ব্যক্তির নাম দিয়েছে, যা তদন্ত শেষ হওয়ার আগে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এদিকে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করলেও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিলম্বের কারণে গাইবান্ধায় পাঁচ জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি পুলিশ। জেএমবি সদস্য শফিকুল ইসলাম ওরফে জামাই রফিক ওরফে হাসান, গিয়াস উদ্দিন ওরফে রাসেল, শাকিল, আব্দুল মজিদ ও আনোয়ার হোসেন ওরফে আর্মি আনোয়ারকে বুধবার বিকেলে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেও বিধান অনুযায়ী স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে তাদের আবার হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে পৌনে ১২টার মধ্যে তাদের সার্টিফিকেট দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে দাবি করেন তিনি।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন