18 April 2010

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যার তিন কারণঃ আসাদ পরিস্থিতির শিকার

চট্টগ্রাম অফিস

সাবেক ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা, বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা ব্ল্যাক জুয়েলের স্বেচ্ছাচারিতা ও গ্রামবাসীকে শিবিরের উসকানি_মূলত এই তিন কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আসাদুজ্জামান আসাদের ওপর হামলা হয়। কিন্তু এই তিন কারণের একটিতেও আসাদ জড়িত ছিলেন না। তিনি পরিস্থিতির করুণ শিকার হয়ে প্রাণ হারান। পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, গ্রামবাসী ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এবং কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে এমন তথ্যই বেরিয়ে এসেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ গতকাল শনিবার বিকেলে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমাদের অনুরোধে গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর সড়কের অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে। পুলিশ প্রশাসনকেও তদন্ত শেষে দোষীদের গ্রেপ্তার করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে।' তিনি বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের দুটি খুনের কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ ব্যাপারে পুলিশের তৎপরতা আরো বাড়ানোর জন্য ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অনুরোধ জানিয়েছি।'

আসাদ হত্যা মামলার তদন্তকারী রেলওয়ে পুলিশের সুপার মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পুরো ঘটনাকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থল
পরির্শন করেন তিনি। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা কিছু পাথর জব্দ করা হয়।

কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'রাত ১১টায় কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব ছাত্র হল ছেড়ে ক্রাইম জোন বলে পরিচিত রেলক্রসিং এলাকায় গিয়েছিলেন, বুঝতে পারছি না। আর গ্রামবাসীও কেন তাঁদের বাধা দিতে সেখানে গেল, গ্রামবাসী কেন মাইকে ডাকাত ডাকাত বলে ঘোষণা দিয়েছিল, আমরা এসবের কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছি। এ ছাড়া কতিপয় ছাত্র সংগঠন প্রথম থেকেই ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে ভিসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।'
এদিকে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ছাত্রলীগের ধর্মঘটের কারণে গতকাল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন বন্ধ ছিল। বেসরকারি যানবাহন হিসেবে পরিচিত 'তরী' সকালের দিকে চলাচল করলেও দুপুরে নগরীর ষোলশহর এলাকায় ছাত্রলীগের কর্মীরা অবরোধের সৃষ্টি করলে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় হল ছেড়ে আসা ছাত্রছাত্রীদের দীর্ঘ পথ হেঁটে এবং সাধারণ যানবাহনে গন্তব্যে পেঁৗছাতে হয়।

ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা : আসাদ হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাতে ঘুরেফিরে আসছে জাহিদুল ইসলাম জুয়েল ওরফে ব্ল্যাক জুয়েলের নাম। মেয়াদোত্তীর্ণ চবি ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক এই জুয়েল। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রথম দিন স্থানীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জোবরা গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার কামাল লিটনের স্ত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অগ্রণী ব্যাংকের সামনে ব্ল্যাক জুয়েলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী চরমভাবে লাঞ্ছিত করে। ব্ল্যাক জুয়েল ও তার অনুসারীরা অশ্লীল ভাষায় উত্ত্যক্ত করতে থাকলে সারোয়ার কামাল লিটন এর প্রতিবাদ করেন। এ সময় লিটনকে মারধর ও তাঁর স্ত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনার পর লিটন বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় ব্ল্যাক জুয়েল, শান্তনু মহাজন, শহিদ, ইকবাল, রাসেল বড়ুয়া, হিমেল, ইরফান, অমিত ও সেতাবকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

লিটনের স্ত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার খবর বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন জোবরা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বৃহস্পতিবার রাতে আসাদসহ তাঁর বন্ধুরা জোবরা গ্রামসংলগ্ন রেলক্রসিংয়ে আড্ডা দিতে গেলে লিটন ও তাঁর স্ত্রীকে লাঞ্ছনাকারী ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী মনে করেই তাঁদের ওপর হামলা চালায় গ্রামবাসী।
হাটহাজারী থানার নবনিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন সেলিম এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ব্ল্যাক জুয়েলের নেতৃত্বে কয়েকজন বখাটে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার কামালের স্ত্রীকে অশ্লীল ভাষায় ইভ টিজিং করেছিল। প্রতিবাদ করায় ছাত্রলীগের ওই নেতাকেও মারধর করা হয়েছিল। এর জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।'

ব্ল্যাক জুয়েলের স্বেচ্ছাচারিতা : জাহিদুল ইসলাম জুয়েল ওরফে ব্ল্যাক জুয়েল ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজ জুয়েল নামেও পরিচিত বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন। বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য পরীক্ষা দিতে না পারায় পদার্থবিজ্ঞানের এই ছাত্রের ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিছুদিন আগে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে জুয়েলকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে চবি প্রশাসন।

তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় ১০টি মামলা ও দুটি জিডি রয়েছে। মামলাগুলোর ধরন হচ্ছে শ্লীলতাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মোবাইল ছিনতাই, হত্যাচেষ্টা ইত্যাদি। নগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আরো দুটি ছিনতাই মামলা রয়েছে বলে কালের কণ্ঠ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন সহকারী পুলিশ সুপার, হাটহাজারী সার্কেল বাবুল আকতার।

তার পরও থেমে ছিল না জুয়েলের অপরাধ কর্মকাণ্ড। গত সপ্তাহে ফতেপুর গ্রামের লোকজন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করে। এরই বদলা নিতে ১৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড় থেকে কাঠ কেটে ফিরে আসার পথে ফরেস্ট্রি অনুষদের সামনে ফতেপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক জগীর আহমেদকে (৪০) ছুরিকাঘাত করে জুয়েলের অনুগত ক্যাডাররা। ঘটনার দিন আসাদকে মারার বদলা নিতে তাৎক্ষণিকভাবে জুয়েলের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় দোকান ভাঙচুর করে ও লুটপাট চালায়। এর পরই পুরো ফতেপুর ও জোবরা গ্রামের লোকজন মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই হাজার গ্রামবাসী জড়ো করে বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে ফেলে।

গ্রামবাসীর অভিযোগও এই জুয়েলকে নিয়ে। ফতেপুর গ্রামের দোকানি এখলাস মোল্লা কালের কণ্ঠকে জানান, 'জুয়েল তার দলবল নিয়ে এসে প্রায়ই বিনা পয়সায় খেয়ে যেত। টাকা চাইলেই উল্টো গালাগাল করে মারধর করতে আসত।'

এদিকে ক্যাম্পাসে যুবলীগ নেতা ও র‌্যাব পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী মামুনুর রশীদ মামুন গ্রুপের নেতা বলে পরিচিত জুয়েলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ যেমন ছিল, তেমনি ছাত্রত্ব না থাকার পরও ছাত্রলীগের মধ্যে ছিল তার ব্যাপক প্রভাব। চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী হওয়ার পরও ছাত্রলীগের যেকোনো আন্দোলনে সে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিত। কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চবি ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, 'জুয়েল খারাপ হলেও সাহসী। যেখানে অন্যরা পালিয়ে যায় সেখানেও সে দাঁড়িয়ে থাকে প্রতিরোধের জন্য। তার একরোখা মনোভাবের কারণে ছাত্রলীগের অনেকেই তাকে ব্যবহার করার সুযোগ নেয়।'
ওই দিনের ঘটনায় কারাগারে আটক থাকায় এসব অভিযোগের ব্যাপারে জুয়েলের কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

গ্রামবাসীকে শিবিরের উসকানি : আসাদ হত্যার ঘটনায় তৃতীয় কারণ হিসেবে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখত এই জোবরা গ্রাম। শিবিরের অনেক নেতা-কর্মী এই গ্রামে বিয়ে করে সংসার করছে। এ কারণে সবসময়ই এই গ্রামের বাসিন্দারা শিবিরের প্রতি দুর্বলতা দেখিয়ে আসছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসরকারি আবাসন গোলবাহার কটেজ ছিল শিবিরের দখলে। কিন্তু চলতি বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র এ এম মহিউদ্দিন সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হওয়ার পর ছাত্রলীগের একটি অংশ শিবিরের নেতা-কর্মীদের বের করে দিয়ে গোলবাহার কটেজ দখল করে নেয়। কটেজহারা শিবিরের নেতা-কর্মীরা জোবরাসহ আশপাশের গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানায়, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা লিটনের স্ত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাকে পুঁজি করে শিবির গ্রামবাসীকে আরো উসকে দেয়। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাতে রেলক্রসিং এলাকায় কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে আসাদসহ অন্যদের বাগ্বিতণ্ডা চলার সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে 'ডাকাত এসেছে' বলে ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধের ডাক দেওয়া হয়। মাইকের ঘোষণা শুনে শত শত গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও দা-বঁটি নিয়ে এগিয়ে আসে। হামলার শিকার সব ছাত্রই ছিল গোলবাহার কটেজের। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি প্রবেশমুখের মধ্যে এক নম্বর রুট ছাত্রলীগ ও দুই নম্বর রুট ছিল শিবিরের দখলে। কিন্তু বর্তমানে কটেজ হারিয়ে শিবিরের বিশাল একটি অংশ এক নম্বর রুট এলাকার গ্রামবাসীর সঙ্গে মিশে যায়। এ এলাকা থেকে ছাত্রলীগকে উৎখাত করতে শিবির গ্রামবাসীকে এ হামলার ইন্ধন দিয়েছে বলে ছাত্রলীগ নেতারাও মন্তব্য করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আলাউদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মাইকে ডাকাত ডাকাত শব্দ শুনে আমরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রকে হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘিরে রেখেছে। পরে আমরা লাঠিচার্জ করে ছাত্রদের সেখান থেকে মুক্ত করে আনি।'
এই হামলার নেপথ্যে শিবিরের ইন্ধন রয়েছে বলে অভিযোগ করে ছাত্রলীগ চবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের সব গ্রাম এখন শিবিরের ঘাঁটি। তারা চাকরি ও বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করার সুবাদে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে গ্রামের নিরীহ বাসিন্দাদের পক্ষে নিচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী। শিবির ইন্ধন না দিলে গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর হামলার সাহস পেত না।'

এই তিনটি কারণ ছাড়াও আসাদের মৃত্যুর পেছনে ছাত্রলীগের কোন্দলকেও দায়ী করেছেন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও ছাত্রনেতা।

আসাদ নিহতের ঘটনায় মামলা : আসাদুজ্জামান আসাদ নিহতের ঘটনায় নয়জন গ্রামবাসীর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন জেমস বাদী হয়ে নগরীর রেলওয়ে থানায় মামলাটি করেন।

বাদী মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এক নম্বর রেলক্রসিংয়ে তিন বন্ধু মিলে আড্ডা দেওয়ার সময় তাদের চোখে হঠাৎ টর্চলাইটের আলো ফেলা হয়। এ সময় নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেওয়ার পর আগতদের 'এত রাতে কেন এসেছে' জিজ্ঞেস করা হয়। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে তারা আসাদকে ছুরিকাঘাত করে। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ফতেপুর গ্রামের বাসিন্দাও।

মামলার এজাহারে ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে ফতেপুর গ্রামের যুবক মিজান, লিটন, সোহান, পিন্টু, ওয়াসিম, রাশেদ, রফিক, মামুন ও হারুনের নাম উল্লেখ করা হয়। তাদের সহযোগী হিসেবে অজ্ঞাতপরিচয় আরো ১২ জন যুবকের কথা রয়েছে। বর্তমানে রেলওয়ের গোয়েন্দা পুলিশের এসআই আবুল হাশেম মামলাটি তদন্ত করছেন।

রিমান্ডের আবেদন : গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী জাহিদুল ইসলাম জুয়েল ওরফে ব্ল্যাক জুয়েল, আক্তারুল হক, রাসেল বড়ুয়া, শান্তনু মহাজন ও মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে আজ রবিবার। বর্তমানে ওই পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মী চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।
হাটহাজারী থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম কালের কণ্ঠকে বলেন, কিরিচ ও রামদাসহ গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ ছাত্রলীগ কর্মীকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে।

বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তারের পর তাদের পরদিন আদালতে হাজির করা হলে আদালত জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তদন্ত কমিটি গঠন : বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসাদ হত্যা ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীনকে প্রধান করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

তদন্ত কমিটি ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ড. মোহাম্মদ আল-আমীন জানান, কমিটি গতকাল বেলা ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে ছবি ও আলামত সংগ্রহ করেছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক, ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের পরিচালক ড. মোহাম্মদ রাশেদ-উন নবী এবং ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আলী হায়দার।

ভিসি ও প্রক্টরকে হত্যার হুমকি : চবি উপাচার্য ড. আবু ইউসুফ ও প্রক্টর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনকে মোবাইল ফোনে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর সত্যতা নিশ্চিত করে চবি প্রক্টর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'গত শুক্রবার রাতে ০১৯২৬-৯৯০৯৪২ নম্বর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একজন আমাকে ও ভিসি স্যারকে হত্যার হুমকি দেয়।'

এ ব্যাপারে হাটহাজারী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করা হয়েছে।

(প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন কমল দে, ফিরোজ শিবলী, রাশেদুল তুষার ও শামীম হাসান, চট্টগ্রাম।)


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন