সেলিম জাহিদ
মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজেদের ভূমিকা নিয়ে লুকোচুরি করবে না জামায়াতে ইসলামী। দলের নীতি-নির্ধারকরা এ বিষয়ে খোলামেলা কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুক্রবার মগবাজারের আল-ফালাহ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির সম্মেলনে তৃণমূলের নেতাদেরও একই কৌশল অনুসরণ করতে বলেছেন।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বৈরী পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এ অবস্থায় বিষয়টি হালকা করার জন্য ওই সময়কার জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান জোরালো বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'একাত্তরে আমাদের ভূমিকা নিয়ে কোনোদিনও লুকোচুরি করিনি। আমরা পাকিস্তানের অবকাঠামোর পক্ষে ছিলাম, কিন্তু পাকিস্তানের কাঠামো ভেঙে যাওয়ার পর এক মুহূর্তের জন্যও আমরা পাকিস্তানের পক্ষে ছিলাম না। গোলাম আযম সাহেবও এ বিষয়ে কথা বলেছেন।'
দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী গত শুক্রবার আমির সম্মেলনে প্রথমবাবের মতো স্বীকার করেন, 'একাত্তরে জামায়াত আন্তরিকভাবে পাকিস্তানকে এক রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু এ চেষ্টা বাস্তব ছিল না।'
জানা গেছে, আমির সম্মেলনে যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকে জামায়াতে ইসলামী 'রাজনৈতিক সমস্যা' হিসেবে বিবেচনা করে আইনের চেয়ে রাজনৈতিকভাবেই তা মোকাবিলা করতে তৃণমূল নেতাদের জোর প্রস্তুতি নিতে বলেছে। ১৯৭৩ সালের সংশোধিত আন্তর্জাতিক অপরাধসমূহ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের প্রতি বিশেষ ভীতি থাকায় মাঠ দখলে নিতে যা যা করণীয়, তাই করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সূত্রের দাবি, যুদ্ধাপরাধ ইস্যু নিয়ে আর মাতামাতি না করে এখন থেকে নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল এবং এ সংক্রান্ত ১৯৭৩ সালের আইন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা চালাতে জামায়াতের আইনজীবী সংগঠনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সম্মেলনে রাজশাহীর ঘটনার পর কোন কোন সাংগঠনিক জেলা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সরকারের দমন-পীড়নের প্রতিবাদে কে কী ভূমিকা রেখেছে, তারও মূল্যায়ন করা হয়।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর জামায়াত আমির রফিকুল ইসলাম খান বলেন, যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটি কোনো আইনি সমস্যা নয়, একটি রাজনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যাকে রাজনৈতিকভাবে রাজপথেই মোকাবিলা করতে হবে।
বিষয়টি স্বীকার করে আলী আহসান মুজাহিদ বলেন, 'ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়নের পথে জামায়াত বড় বাধা। এই বাধা ঠেকাতে সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশেই বিচারের আয়োজন করছে। সে জন্য রাজনৈতিকভাবেই এর মোকাবিলা করতে হবে।'
নাগরিক দুর্ভোগ নিয়ে আন্দোলনের বিষয়ে মুজাহিদ বলেন, 'মানুষ না খেয়ে মরছে, পানি না পেয়ে ধুঁকছে, কে কখন মরে, কে কখন ইজ্জত হারায়_এর ঠিক নেই। জামায়াত জনগণের দল, তাই এসব বিষয়ে কথা বলা আমাদের দায়িত্ব।'
জেলা আমির সম্মেলনের প্রস্তাব
এদিকে জামায়াতের জেলা আমির সম্মেলনে নেতারা সরকারকে বিরোধী দলের ওপর জুলুম-নির্যাতনসহ সব মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
নেতারা বলেন, সরকারের অন্যায়, অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের কারণে যদি গণতন্ত্র ব্যাহত হয়, এর জন্য জনগণ সরকারকেই দায়ী করবে। জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের ওপর সরকারের নির্যাতন-নিপীড়নে সম্মেলনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির আতাউর রহমান ও সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ, সহকারী সেক্রেটারি সিদ্দিক হোসাইনসহ জামায়াত-শিবিরের গ্রেপ্তারকৃত আট শতাধিক নেতা-কর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সরকারকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে বলা হয়।
মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডের বিচারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে না : শিবির
সরকার নিত্যদিনের সমস্যার সমাধান না করে মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ডের বিচারের নামে ইসলামী নেতাদের ফাঁসানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু এ দেশের ছাত্রসমাজ কখনোই সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেবে না। গতকাল শনিবার বিকেলে আরামবাগ পুলিশ বক্সের সামনে এক সমাবেশে ছাত্রশিবিরের সভাপতি রেজাউল করিম এসব কথা বলেন। এর আগে শিবিরের নেতা-কর্মীরা পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সমস্যার সমাধানের দাবিতে মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন।
সমাবেশে শিবির সভাপতি আরো বলেন, জনদুর্ভোগ মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার কারণে ক্রমেই জনগণ বিক্ষুব্ধ হচ্ছে। আর জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্যই সরকার ন্যক্কারজনকভাবে জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরো বক্তব্য দেন শিবিরের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, নূর মুহাম্মদ মণ্ডল প্রমুখ।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন