বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপিপন্থী পরিচয় দিয়ে শিক্ষক রাজনীতি করে এলেও এবার ধরা পড়ে গেছেন জামায়াতপন্থী ছয় শিক্ষক। গোপন বৈঠকে বিএনপিপন্থী সিনিয়র শিক্ষকদের স্বাক্ষর জাল করে শিবিরের পক্ষে স্মারকলিপি তৈরি করতে গিয়ে তাঁরা ধরা পড়েন। বৈঠকে কাউকে না জানিয়েই তাঁরা সাদা দলের চার সদস্যের একটি নীতিনির্ধারণী ফোরামও গঠন করেন। ঘটনাটি জেনে মূলধারার বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে তাঁদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন এবং ধাওয়া দিয়ে ক্লাব থেকে বের করে দেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-ক্লাব জুবেরী ভবনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করে জামায়াতচক্র যেন কোনো রাজনীতি করতে না পারে সে ব্যাপারে তাঁরা কাজ করে যাবেন।
জামায়াত সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হয়ে পড়া এই ছয় শিক্ষক হলেন ড. মু. আজহার আলী, এম সাদেকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম ও ড. হাসানাত আলী।
বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহীদুল্লাহ কলা ভবনের ৪০৪ নম্বর কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষক গ্রুপের (সাদা দল) ব্যানারে গোপন বৈঠক করেন। এতে আবুল হাশেম, ড. বেলাল হোসেন, ড. আজহারুল ইসলাম, ড. আব্দুল হান্নানসহ জামায়াতের ৪০-৪৫ জন শিক্ষক অংশ নেন। রুদ্ধদ্বার এ বৈঠকে বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ড. মু. আজহার আলীসহ ১০-১৫ জন শিক্ষকও অংশ নেন। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি নিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষক ড. মু. আজহার আলীকে আহ্বায়ক এবং ড. সি এম মোস্তফা, ড. বেলাল হোসেন ও ড. এফ নজরুল ইসলামকে সদস্য করে সাদা দলের চার সদস্যের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী একটি ফোরাম গঠন করা হয়। এ ছাড়া সভায় ক্যাম্পাসসহ সারা দেশে শিবির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধে দুই শতাধিক শিক্ষকের স্বাক্ষর সংবলিত একটি স্মারকলিপি তৈরি করা হয়।
স্মারকলিপিতে যেসব শিক্ষকের স্বাক্ষর রয়েছে এর মধ্যে ১৫২ জন মূলধারার বিএনপিপন্থী শিক্ষক রয়েছেন। অথচ গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের শিক্ষকদের সাদা দলে না রাখার দাবিতে তৈরি একটি স্মারকলিপিতে তাঁদের স্বাক্ষর রয়েছে। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে গোপন বৈঠকে ওই স্বাক্ষরগুলোই জাল করে শিবিরের পক্ষে স্মারকলিপি তৈরি করা হয়।
সাদা দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম গঠন হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে এর নেতারা জুবেরী ভবনে এসে জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত মূলধারার বিএনপি অনুসারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম মিঞা, আতাউল্যাহ্, খালেদউজ্জামান মিজান, এস এম শফিউজ্জামান ডাবলু, গোলাম আরিফ, নেছার উদ্দিন রাকিবসহ ৩০-৩৫ জন শিক্ষক ড. আজহার আলীর কাছে জামায়াতের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে বিধি বহির্ভূতভাবে সাদা দলের কমিটি আলাদা ফোরাম গঠন এবং স্বাক্ষর জাল করে শিবিরের পক্ষে স্মারকলিপি তৈরির কারণ জানতে চান। এ সময় ড. আজহার আলী, এম সাদেকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলাম উল্টো ওই শিক্ষকদের ওপর চড়াও হলে দুই পক্ষের মধ্যে চরম বাকবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।
হট্টগোলের এক পর্যায়ে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা আজহার আলী, সাদেকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় সাবেক প্রক্টর শামসুল আলম সরকার উত্তেজিত হয়ে 'যা বায়ান্ন তাই তিপ্পান্ন। যা বিএনপি তাই জামায়াত' বলে মন্তব্য করলে বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা ফোরামের নির্বাচিত নেতাসহ বিএনপি নামধারী জামায়াতের শিক্ষকদের 'ধর ধর জামায়াতের দালাল ধর' বলে ধাওয়া করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিএনপি নামধারী জামায়াতের ১২-১৩ জন শিক্ষক জুবেরী ভবনের পেছন গেট দিয়ে দৌড়ে কাজলার দিকে চলে যান। এ সময় জুবেরী ভবনে কয়েক শ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুই গ্রুপ শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতাণ্ডার সময় কৌশলে জামায়াতের ২০-২৫ জন শিক্ষক জুবেরী ভবন থেকে কেটে পড়েন।
এ ব্যাপারে বিএনপিপন্থী শিক্ষক খালেদউজ্জামান মিজান ও আতাউল্যাহ্ বলেন, 'আমরা শুদ্ধি অভিযানে নেমেছি। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ব্যবহার করে জামায়াতচক্র যেন কোনো রাজনীতি করতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। শিগগিরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা জিয়া পরিষদও জামায়াত-শিবিরমুক্ত করা হবে।' কলা অনুষদের ডিন মোহাম্মদ শাফি জানান, কলা ভবনের ৪০৪ নম্বর কক্ষে সভা করার জন্য কেউ তাঁর কাছ থেকে অনুমতি নেয়নি। ড. আজহার আলী, এম সাদেকুল ইসলাম ও নজরুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন