ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ০১-০৪-২০১০
মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য জামায়াতে ইসলামী ক্ষমা চাওয়ার কথা চিন্তা করছে—গত জানুয়ারি মাসে দলটির দুজন শীর্ষস্থানীয় নেতা দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে এমন কথা বলেছিলেন। এখন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে দলটি। উপরন্তু এ বিষয়ে প্রস্তাব করায় দলের অভ্যন্তরে তিরস্কৃত হয়েছেন কয়েকজন নেতা।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণকারী জামায়াত গত ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার নামে কয়েকজনকে সম্মাননা দিয়েছিল। দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের একজন সদস্য বলেছেন, তাঁদের মূল্যায়নে দলের এই কর্মসূচি বেশ ইতিবাচক হয়েছে। কারণ ’৭১ সালে জামায়াতের অবস্থান দলটির বড় ধরনের দুর্বলতা।
২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, তাঁরা ’৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার চিন্তা করছেন। এর কয়েক দিন পর নির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে একই কথা বলেছিলেন। দুই নেতা তখন বলেছিলেন, ’৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার কারণে দলটি ক্ষমা চাওয়ার কথা ভাবছে। দলের নির্বাহী কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে একাধিক দিন আলোচনাও হয়েছে।
ওই সব বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা গত রোববার প্রথম আলোকে জানান, ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব কয়েকজন নেতা তুলেছিলেন। তবে অন্য নেতারা ওই প্রস্তাব ভালোভাবে নেননি। তাঁদের তখন কটাক্ষও করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আলোচনা হওয়া আর দলের সিদ্ধান্ত এক না। জামায়াত ক্ষমা চাইবে না।’
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান বা আবদুর রাজ্জাক—কেউই এখন আর এ বিষয়ে কথা বলতে চান না। গত ১০ মাসে কামারুজ্জামানসহ দলের একাধিক নেতার কাছে বিষয়টি নিয়ে দলের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে তাঁরা হয় এড়িয়ে গেছেন, না হয় বলেছেন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
সম্প্রতি জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো দিন কথা বলেননি। যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অবশ্য গত ১ নভেম্বর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে কাদের মোল্লা অন্য একটি প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘মাফ না চাইলে বলে “মাফ চায় না কেন”। গোলাম আযম সাহেব দুঃখ প্রকাশ করলে বলে “দালালদের ক্ষমা নাই”। আমাদের মতো করে আমরা বলি; যার পছন্দ হয় হোক।’
’৭১ সালের অবস্থানের ব্যাপারে জামায়াত লজ্জিত কি না এবং জামায়াত এ জন্য ক্ষমা চাইবে কি না—গতকাল জামায়াতের সংবাদ সম্মেলনে দলের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে ফিরে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বলেছিলেন, ’৭১ সালে জামায়াত কোনো ভুল করলে সে জন্য তাঁরা দুঃখিত। তবে ২০০০ সালের ৭ নভেম্বর দৈনিক যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, ’৭১ সালে জামায়াতের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ভুল ছিল—এটা দাবি করা ঠিক নয়। এর এক সপ্তাহ আগে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে ’৭১ সালে জামায়াতের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ক্ষমা না চাওয়ার যুক্তি হিসেবে গোলাম আযম বলেন, শুধু জামায়াত নয়, ইসলামপন্থী কোনো দলই স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছে বলে প্রমাণ করা যাবে না।
তবে গত বছরের শুরুর দিকে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিরোধিতা করা জামায়াতের রাজনৈতিক ভুল ছিল।
জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংগঠনটি একাধিকবার ঘরোয়া আয়োজনে জামায়াতকে ’৭১-এর অবস্থানের বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। শিবিরের সভাপতি মো. রেজাউল করীমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গত নভেম্বর মাসে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা মনে করি, বিষয়টি মিটিয়ে ফেলা জামায়াতের জন্য ভালো হয়। তবে বিষয়টি জামায়াতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ নিয়ে আমাদের কোনো মন্তব্য নেই।’
বর্তমানে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সক্রিয় সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে। তবে জামায়াত দাবি করে আসছে, তাদের নেতারা ’৭১ সালে যুদ্ধাপরাধ করেননি। রাজনৈতিক কারণে তাঁদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রাফিউদ্দিন আহমদের কাছে গত ডিসেম্বর মাসে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, ‘যেহেতু নির্বাহী ও শুরা আমাকে ক্ষমতা দেয়নি, আমি কোনো কথা বলব না।’
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন