টিপু সুলতান | তারিখ: ২৬-০৩-২০১০
যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রাথমিকভাবে ২৫ জনের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করেছে কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা। সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটিকে সহায়তা করতেই মাসখানেক ধরে গোয়েন্দারা ওই সন্দেহভাজনদের অপরাধের ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
প্রাথমিকভাবে যে ২৫ জনের ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে, তাঁদের অনেকেই জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ পর্যায়ের নেতা।
এ তালিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও দলটির সাবেক সাংসদ আবদুল আলীমের (জয়পুরহাট) নামও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাকি ২৪ জন হচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম (বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আছেন), জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফ, মাওলানা আবদুস সুবহান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলী, জামায়াতের সাবেক সাংসদ আনসার আলী (সাতক্ষীরা), জামায়াতের রুকন এ বি এম খালেক মজুমদার (দোহাটা, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর), ঢাকা মহানগর শাখার সাবেক আমির গোলাম সরোয়ার (লক্ষ্মীপুর), একাত্তরে জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় নেতা মো. ইউনুস ও আশরাফ হোসাইন (ইকবালপুর, জামালপুর), একাত্তরে মালেক মন্ত্রিসভার সদস্য মাওলানা মো. ইসহাক, মাহমুদ আলী (সুনামগঞ্জ), এ এন এম ইউসুফ (ডাকপাড়া, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার), ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল বাছেত (সোমজানি, কালিহাতী, টাঙ্গাইল), আবদুল মতিন ভুঁইয়া (নান্দাইল, ময়ময়নসিংহ), ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার (সাবলীচর, মঠবাড়ী, বরিশাল), মাওলানা আবুল কালাম আযাদ (খাগদিয়া, নগরকান্দা, ফরিদপুর), মো. কায়সার (নোয়াপাড়া, মাধবপুর, হবিগঞ্জ) ও আবদুল মজিদ তালুকদার (দুপচাঁচিয়া, সান্তাহার, বগুড়া)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সংগঠন ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে যে ৫০ জনের নাম প্রকাশ করেছে, তাতেও উল্লিখিত ২৫ জনের নাম রয়েছে।
সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব লে. জেনারেল হারুন-অর-রশীদ এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা অনেক যাচাই-বাছাই করে ওই ৫০ জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকা প্রকাশ করেছিলেন। তবে তালিকার অনেকে বিভিন্ন সময় মারা গেছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আশায় আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করে আসছি। দেরিতে হলেও এ উদ্যোগ নেওয়ায় আমরা আনন্দিত। আমরা তদন্তকারী সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনালের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। আর আশা করব তাঁরা নিবেদিতভাবে সত্যকে বের করে আনবেন। এবং এই বিচারের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’
অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পক্ষাবলম্বন করে হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাপারে গোয়েন্দা-অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত তদন্তকারীদের দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও জানায়, তাদের এ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে প্রাথমিক সূত্র হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষক মেজর (অব.) এ এস এম সামছুল আরেফিনের বইয়ের তথ্যগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে গতকাল বিকেলে এ এস এম সামছুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘ গবেষণা ও তথ্য-উপাত্ত যাচাই করে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের এসব তথ্য তাঁর বইয়ে লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন সরকার বিচারকাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারলে ভালো।’
গতকাল সরকার-ঘোষিত যুদ্ধাপরাধের তদন্ত দলে সামছুল আরেফিনকেও রাখা হয়েছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন