আসাদুর রহমান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করে ছাত্রশিবিরের শতাধিক বহিরাগত ক্যাডার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরূপ পরিস্থিতিতে তারা এ কৌশল নেয় বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। গত রবিবার পুলিশের হাতে চারটি ভুয়া পরিচয়পত্রসহ এক শিবির ক্যাডার আটক হওয়ায় বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখে হলে প্রবেশের অনুমতি দেয়। কিন্তু ভুয়া পরিচয়পত্র থাকায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব বহিরাগত শিবির ক্যাডার। বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের বিভিন্ন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ভয়ে তারা নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়েছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ছাত্রশিবির ক্যাডারা নির্বিঘ্নেই ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছে। তবে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা ক্যাম্পাসে অবস্থান ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার কৌশল পরিবর্তন করে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হলের একাধিক কর্মচারী জানান, রাতে হলে অবস্থানের জন্য শতাধিক বহিরাগত শিবির ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করেছে।
সূত্র আরো জানায়, শিবির ক্যাডারদের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী ফারুক খুন হওয়ার পর শিবির ক্যাডাররা গা-ঢাকা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটিতে শিবিরের যেসব নেতাকর্মী রয়েছে, তারা গ্রেপ্তারের ভয়ে ক্যাম্পাসে আসতে পারছে না। এ অবস্থায় বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা বিভিন্ন বিভাগের ভুয়া পরিচয়পত্র তৈরি করে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে। কেননা, ক্যাম্পাসে এসব মুখ শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত নয়। আর এসব বহিরাগত ক্যাডারের মাধ্যমেই জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসের খোঁজ-খবর রাখছে। এ ব্যাপারে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি শামসুল আলম গোলাপের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তব্যরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী কালের কণ্ঠকে বলেন, শিবির কর্মীদের কয়েকটি শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে এক শ্রেণীর কর্মী আছে যারা জনসাধারণের সামনে কখনো শিবিরকর্মী হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় না। এই শ্রেণীর কর্মীরা বর্তমানে ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং শিবিরকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সাহায্য করছে। তারা আরো বলেন, প্রশাসনিক ভবন, চা স্টলসহ বিভিন্ন স্থানে এরা প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আবাসিক হলগুলোতে ৯০ ভাগ কর্মচারীই জামায়াত শিবির সমর্থিত। এসব কর্মচারীও হলের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে শিবির নেতাকর্মীদের কাছে তথ্য দিয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি-জামায়াতপন্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিতর্কিতভাবে ৫৪৪ জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ দেয়। এদের মধ্যে ১৯৬ জনের চাকরি স্থায়ী হয়। এসব কর্মচারী বর্তমানে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন