আনু মোস্তফা, রাজশাহী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় জামায়াত শিবিরের বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডাররা জড়ো হচ্ছে এবং তারা ক্যাম্পাসে ঢোকার চেষ্টা করবে, এ আশঙ্কার আভাস আগেই পেয়ে তা পুলিশকে জানিয়েছিলেন উপাচার্য ড. এম সোবহান। রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মো. নওশের আলীও উপাচার্যকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, 'পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রতিটি পয়েন্টে সক্রিয় অবস্থানে আছে। আপনার আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। শিবির বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবে না।' এই বলে পুলিশ কমিশনার বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। এর পর পরই শিবিরের ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে ঢুকে তাণ্ডব ও হত্যাকাণ্ড চালায়।
সোমবার গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের দায়িত্বশীলতা নিয়ে গতকাল বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের এভাবেই বর্ণনা দিচ্ছিলেন উপাচার্যসহ প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। সবার একটাই কথা, 'আমরা তো ঘটনা আঁচ করতে পেরে আগেই পুলিশকে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ করলোটা কী?'
এ প্রশ্ন এখন অনেকের। উপাচার্য ড. এম সোবহান বলেন, 'সোমবার রাত ৮টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগ কর্মী আসাদ ও কাওসার শিবির ক্যাডারদের হামলায় গুরুতর আহত হওয়ার পর পরই আমি পুলিশ কমিশনারসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাস পরিস্থিতি সবিস্তারে অবহিত করি। পুলিশ কমিশনার ফোর্সসহ ভিসি লাউঞ্জে আসেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ও আবাসিক হলগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে পুলিশ আংশিক তল্লাশি করে। প্রতিটি হলের প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের নিজ নিজ হলে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল।'
উপাচার্যসহ রাবি প্রশাসনের কর্মকর্তারা আরো জানান, কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বিনোদপুর, কুখণ্ডি, কাটাখালী, মেহেরচণ্ডি প্রভৃতি এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা ফোন করে জানান, বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা এসব এলাকায় জড়ো হচ্ছে। তারা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে পারে। বহিরাগতদের সংগঠিত করছে বিভিন্ন হলের শিবির ক্যাডাররা_এ খবরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আসতে থাকে।
রাবি প্রশাসনের সূত্রগুলো আরো জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাদের কাছে খবর আসে শিবিরের জাফর বাবু, সালেকীন ও হামিমের নেতৃত্বে শতাধিক ক্যাডার বিনোদপুরে খোরশেদ নামের এক জামায়াত নেতার বাড়ির সামনে জড়ো হচ্ছে। বিনোদপুর এলাকায় ছাত্রাবাসে বসবাসকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রও ফোন করে সহকারী প্রক্টরদের এ তথ্য জানান। এ ছাড়া শিবির ক্যাডার শাহীনের নেতৃত্বে শতাধিক বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনের কাছে এবং মেহেরচণ্ডি ও বুথপাড়ায় আরো ক্যাডার জড়ো হচ্ছে_এসব খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উপাচার্যকে অবহিত করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
উপাচার্য বলেন, ''এসব খবর আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কমিশনারকে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে অভিযান পরিচালনার অনুরোধ করি। পুলিশ কমিশনার এ সময় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে অবস্থান করছিলেন। তিনি শুধু 'দেখছি' বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।''
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ওই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমিসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা হলগুলোর অবস্থা দেখার জন্য একযোগে বের হই। প্রথমে বঙ্গবন্ধু হল দিয়ে শুরু করে আমরা রাত সাড়ে ১১টার দিকে এসএম (শাহ মুখদুম) হলে গিয়ে পেঁৗছাই। হলের নিচতলায় টিভি রুমে ফারুক হোসেনসহ ১৫-১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে দেখতে পাই। এ সময় তাদের খুব ভয়ার্ত দেখাচ্ছিল। তাদের আশপাশে ঘোরাঘুরি করছিল হলে অবস্থানকারী বেশ কয়েকজন শিবির ক্যাডার। প্রক্টর বলেন, 'ফারুক আমাকে বলেছিল, 'স্যার, আমাদের চলে যেতে দেন। পরিস্থিতি ভালো মনে হচ্ছে না। শিবির ক্যাডাররা হলের ভেতরেই অবস্থান করছে। পারলে হল রেইড করুন।' প্রক্টর আরো বলেন, 'এ অবস্থায় আমরা হলগেটে কর্তব্যরত পুলিশদের বলি, প্রয়োজন হলে এসব ছাত্রের নিরাপত্তা দিতে পারবেন? তাদের একজন আমাদের বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন স্যার, আগে আমাদের জীবন যাবে, পরে ছাত্রদের গায়ে কেউ আঁচড় দিতে পারবে। কোনো চিন্তা করবেন না স্যার। আপনারা চলে যান।'
প্রক্টর জানান, 'এসএম হল পরিস্থিতি দেখে আমরা পাশাপাশি আমীর আলী ও সামনের লতিফ হল পরিদর্শন করি। এ তিনটি হলের মাঝখানে এ সময় রাজশাহী পুলিশের উপকমিশনার সরদার নুরুল আমীন, এসি হুমায়ুন কবির, জাহাঙ্গীর, এসি তারেক ও র্যাবের একজন কর্মকর্তা ফোর্সসহ অবস্থান করছিলেন। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি শান্ত দেখে আমরা সবাই রাত দেড়টার দিকে ভিসি লাউঞ্জে ফিরে যাই। সেখানে বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা অবস্থান করছিলেন।'
উপাচার্য ড. এম সোবহান আরো বলেন, 'রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিসি লাউঞ্জে বসে পুলিশ কমিশনারকে ক্যাম্পাসের আশপাশের এলাকায় শিবির ক্যাডারদের সমবেত হওয়ার কথাটি আমি আবারও অবহিত করি। তিনি আমাকে বারবারই আশ্বস্ত করে বলেন, ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। পুলিশও সজাগ আছে। কোথাও কিছু হবে না। পুলিশ কমিশনার ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নেওয়ার সময় আমাকে আবারও আশ্বস্ত করে বলেন, রাতে কোনো কিছু ঘটার আশঙ্কা নেই।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশ কমিশনার ক্যাম্পাস ত্যাগ করার পর রাত আনুমানিক ১টার দিকে পুলিশের বেশকিছু গাড়ি কাজলা গেট দিয়ে বাইরে চলে যায়। অতিরিক্ত পুলিশ ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে, এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই আগে জানাননি। উপাচার্য বলেন, 'পুলিশ ক্যাম্পাস ছেড়ে যাচ্ছে জানলে আমি অবশ্যই নিষেধ করতাম।'
প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা জানান, অতিরিক্ত পুলিশ চলে যাওয়ার আধাঘণ্টা পর রাত আনুমানিক ১টা ৫০ মিনিটের দিকে বিনোদপুর, বধ্যভূমি, বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন, চারুকলাসহ বিভিন্ন গেট দিয়ে কয়েক শ সশস্ত্র শিবির ক্যাডার 'জয় বাংলা' স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ে। তারা পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ক্যাম্পাসে হত্যাকাণ্ডসহ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালায়। গুলি আর ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ ভিসি লাউঞ্জে বসেই শুনতে পান তাঁরা।
উপাচার্য বলেন, ''রাবি মেডিক্যাল সেন্টারের একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে আমাকে ফোন করে বলেন, স্যার, চারদিক দিয়ে বহিরাগত শিবির ক্যাডাররা দলে দলে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। আমি এ খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশ কমিশনারকে ফোন করি। কমিশনার সরাসরি ফোনটি ধরেননি। পুলিশের যে সদস্য প্রথমে ফোনটি ধরেছিলেন, তিনি আমাকে বলেন, কমিশনার স্যার ঘুমিয়ে পড়েছেন। এখন দেওয়া যাবে না। আমি তাকে 'ক্যাম্পাস পরিস্থিতি খুবই খারাপ, কমিশনারকে ফোন দেন' বললে তিনি কমিশনারকে ডেকে আনেন। পরে কমিশনারকে ক্যাম্পাসে গোলাগুলি ও শিবিরের হামলার কথা জানিয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ করি।" কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশ কোনো কিছুই করতে পারেনি উল্লেখ করে উপাচার্য আরো বলেন, 'রাত ৩টার দিকে আবার যখন অতিরিক্ত পুলিশ ক্যাম্পাসে আসে তখন আমরা ফারুককে হারিয়ে ফেলেছি।' উপাচার্য সোমবার রাতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে আবারও বলেন, 'ফারুককে হত্যার পর শিবির লাশ গুমের সময় পেল কীভাবে, এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। আমি এসব বিষয় সরকারকে অবহিত করেছি।'
প্রক্টর চৌধুরী জাকারিয়া ক্যাম্পাসে সোমবার রাতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে বলেন, 'গোলাগুলি থেমে গেলে আমরা রাত ৪টার দিকে আবারও এসএম হলে যাই। সেখানে এসি জাহাঙ্গীরসহ কয়েকজন পুলিশকে গেটের কাছে দেখতে পাই। তাঁরা কোনো কথা বলছিলেন না। হলের দুজন গার্ডও ছিল না সেখানে। হলের টিভি রুমে গিয়ে দেখি, চাপ চাপ রক্তে মেঝে ভিজে আছে। আমরা আশঙ্কা করছিলাম, কয়েক ঘণ্টা আগে যেসব ছাত্রকে আমরা রেখে গেলাম, তাদের মধ্যে কেউ হয়তো নেই। ঘাতকরা তাদের কারো প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। সকালে তা সত্য প্রমাণ হলো।'
প্রক্টর বলেন, 'ছাত্রদের রক্ত দেখে আমরা ওই সময় এসি জাহাঙ্গীরসহ অন্য পুলিশদের বলি, আপনারা না কিছুক্ষণ আগেই আমাদের নিশ্চিত করেছিলেন, ছাত্রদের আগে আপনাদের মারতে হবে! এরা আপনাদের সন্তান, ভাই হলে কী করতেন? আপনারা কিছুই করেননি। এসি জাহাঙ্গীর কোনো কথা বলেননি।'
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রাতেই প্রক্টরসহ অন্য কর্মকর্তারা রক্তের দাগ অনুসরণ করে লাশ খোঁজার চেষ্টা করেন। ঘণ্টাখানেক কাটে এভাবেই। কোনো লাশ না পেয়ে অন্য হলগুলোর অবস্থা দেখে ভোর সাড়ে ৫টার সময় তারা ফেরেন ভিসি লাউঞ্জে। মঙ্গলবার সকালে ম্যানহোল থেকে ফারুকের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রক্টর বলেন, 'ভোরের দিকে আমরা চলে আসার সময় ডিসি নুরুল আমীনকে আবারও তিন হলের মাঝখানে নিশ্চুপ বসে থাকতে দেখি। আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আপনারা রাতভর কী দায়িত্ব পালন করলেন? জবাবে তিনি বলেন, তারা শিবিরের হামলা ঠেকাচ্ছিলেন।'
প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিবিরের বহিরাগতরা প্রতিটি হলের গেট দিয়েই ভেতরে ঢুকেছে। গেটে পুলিশ থাকলে কীভাবে তা সম্ভব হয়? পুলিশ বাধা দিলে তাদের কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারত। সহকারী প্রক্টর জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, কোনো হলেই তালা ভেঙে শিবির ঢোকেনি। কারণ তালা অক্ষত পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, হলগেটে তালা কারা খুলে দিল, এটা এখন বড় প্রশ্ন। আর পুলিশই বা কী করছিল এ সময়?
রাবি প্রশাসনের কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, এসএম, সোহরাওয়ার্দী, লতিফ ও আমীর আলী হলে নিয়োজিত পুলিশদের কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করেনি। এ চারটি হলেই শিবির তাণ্ডব চালিয়েছে ঘণ্টাব্যাপী। শুধু জিয়া হলে ঢোকার চেষ্টা করেও পুলিশের বাধার মুখে শিবির ক্যাডাররা ফিরে যেতে বাধ্য হয়। জিয়া হল গেটেও সমানসংখ্যক পুলিশ ছিল। কর্মকর্তাদের প্রশ্ন, ফারুককে হত্যার পর লাশ গুমের এতটা সময় ঘাতকরা পেল কেমন করে? তাহলে এ সময় পুলিশ কোথায় কী করছিল? সে জবাব এখন পুলিশের কাছে নেই।
উপাচার্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'ফারুক আমাদের ছাত্র। তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে মর্গে নিয়ে গেছে। তারা আমাদের অনুমতি নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি। আমাদের জানায়নি কিছুই।'
জানা গেছে, ক্যাম্পাসে শিবির তাণ্ডব চালানোর সময় পুলিশের কমান্ড কর্মকর্তাদের গাফিলতি নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেক সদস্য। এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকারের কাছে তা জানানো হয়েছে। উপাচার্যও এর সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি রাবি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যেও সমন্বয়ের অভাব ছিল বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাবি প্রশাসনের সাবেক এক শিক্ষক বলেন, শিবির আক্রমণ করবে_এ খবর পাওয়ার পরও হল প্রভোস্ট ও হাউস টিউটরদের রাতে হলে রাখা হয়নি। হল প্রশাসনের কর্মকর্তারা হলে থাকলে তাঁরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা নিতে পারতেন। রাবি প্রক্টর বলেন, 'আমি কোনো হলেই কোনো প্রভোস্টকে পাইনি, তাণ্ডবের পর হলগুলো আবার পরিদর্শনে যাই।'
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার রাতের ঘটনায় পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহীর উপপুলিশ কমিশনার সরদার নুরুল আমীন (ডিসি সদর) বলেন, আসলে ওই সময় ক্যাম্পাসে জিয়া হলের সামনে পুলিশের সঙ্গে শিবির ক্যাডারদের সংঘর্ষ বাধে। শিবির ক্যাডাররা পুলিশের ওপর গুলিবর্ষণ ও প্রচুর ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের প্রতিরোধ করতে ক্যাম্পাসের অধিকাংশ পুলিশ সেখানে চলে যায়। আর এই সুযোগেই শিবির ক্যাডাররা এসএম হলে ঢুকে ফারুককে হত্যা ও অন্য কয়েকটি হলে তাণ্ডব চালায়। তবে তিনি বলেন, ওই রাতে এসএম হল গেটে দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগে ইতিমধ্যে আট পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্য কোথাও পুলিশের দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘুমিয়ে পড়ার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার নওশোর আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'প্রশ্নই আসে না। ঘটনার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ভিসি স্যারের সঙ্গেই ছিলাম। তিনি আমাকে বলেছিলেন, আপনি মনে হয় ক্লান্ত। চলে যান। তারপর আমি চলে আসি। তবে আমি চলে আসার পরপরই ক্যাম্পাসে পুলিশের সংখ্যা কমে যাওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।'
গতকাল ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো ঘুরে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডারদের সঙ্গে বিপুলসংখ্যক বহিরাগত সোমবার রাতের তাণ্ডবে অংশ নেয়। মেহেরচণ্ডি এলাকার এক মসজিদের ইমাম নাম প্রকাশ না করে বলেন, শিবির ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে তাণ্ডব শেষে 'এই ক্যাম্পাস শিবিরের, আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়। তারা দলবদ্ধভাবে রাতের বাকি সময়টুকু কাটায় বিভিন্ন মসজিদে। আর ভোর হতেই ব্যাগ নিয়ে চলে যায় বিভিন্ন গন্তব্যে। ভোরের দিকে শিবিরের নিয়ন্ত্রিত মেসগুলো তল্লাশি করলে অনেক ক্যাডার আটক হতে পারত বলেও জানিয়েছেন বিনোদপুর এলাকায় বসবাসকারী এক ছাত্র।
পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল
আহত সহকর্মীদের দেখতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী ঢাকায় এসে কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই রাতে পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এমবিএ) ছাত্র সোহাগ জানান, হলগুলোতে হামলা চালানো হলেও পুলিশ ছাত্রলীগ কর্মীদের বলেছে শান্ত থাকতে। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে বলেও আশ্বাস দেয়। তবে জিয়া হল ছাড়া অন্য হলগুলোতে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না।
ছাত্রলীগ কর্মী ডালিম, শামিম, লিয়ন, দ্বীপ, মিঠু, তৌহিদ ও মামুন জানান, প্রত্যেক হলে ১১ জন করে পুলিশ থাকার কথা থাকলেও হামলার সময় তাদের ভূমিকা দেখা যায়নি। শফিউল্লাহ নামের এক ছাত্রকে পুলিশের সামনেই পেটানো হয়েছে। হামলায় নিহত ফারুককে পুলিশের সামনেই টেনেহেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাত্রলীগ কর্মীরা জানান, জামায়াতের সম্মেলন উপলক্ষে রাজশাহীতে আসা বিভিন্ন এলাকার ক্যাডারদের নিয়ে ওই হামলা চালানো হয়েছে। হামলায় আহতদের মধ্যে ফিরোজ, বাদশা ছাড়াও রাজশাহীতে চিকিৎসাধীন চার-পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ১৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কাওসার, রুহুল আমিন, আসাদ, শফিউল্লাহ ও লুৎফরকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকায় নিয়ে আসার কথাবার্তা চলছিল।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন