19 February 2010

সিলেট সরকারি কলেজঃ ছাত্রলীগ-শিবির ব্যাপক সংঘর্ষ, ২৫ কক্ষে আগুন, কলেজ বন্ধ




নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট | তারিখ: ১৯-০২-২০১০



সিলেট সরকারি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাপক হাঙ্গামা হয়েছে। এ সময় ধাওয়া, ইটপাটকেল ছোড়া ও ছাত্রাবাসের ২৫টি কক্ষে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ইটপাটকেল নিক্ষেপে পার্শ্ববর্তী এমসি কলেজের ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছয়জন আহত হন। ছাত্রলীগ কলেজ শাখার অভিযোগ, শিবিরের ক্যাডাররা বহিরাগতদের নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালালে এ হাঙ্গামা শুরু হয়। শিবিরের পাল্টা অভিযোগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটায়। কলেজ কর্তৃপক্ষ ক্রীড়া অনুষ্ঠান স্থগিত করে ১০ মার্চ পর্যন্ত কলেজের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে।



সিলেট সরকারি কলেজে গতকাল সংঘর্ষের একপর্যায়ে ছাত্রাবাসে ছাত্রশিবির কর্মীদের কক্ষ ও বিছানাসহ মালামালে আগুন ধরিয়ে দেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। ছবি: আনিস মাহমুদ


প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল কলেজ চত্বরে বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় শিবিরের কলেজ শাখার কর্মীদের সঙ্গে পাশের এমসি কলেজ শাখা শিবিরের সভাপতি ইয়াছিন খান ও সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম থাকায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবের পর শিবিরের নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন। গতকাল সকাল থেকে বহিরাগতদের নিয়ে তাঁরা সংগঠিত হয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেন।

বেলা ১১টার দিকে বহিরাগতদের বিষয় নিয়ে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মীর সঙ্গে শিবিরকর্মীদের বাগিবতণ্ডা হয়। এর জের ধরে ঘণ্টাখানেক পর শিবিরের কলেজ শাখার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বহিরাগত শিবিরকর্মীরা এসে যোগ দেয়। এদিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সংগঠিত হলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া করে শিবিরকর্মীদের ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেন।

ধাওয়া খেয়ে শিবিরের নেতা-কর্মীরা তাঁদের নিয়ন্ত্রণে থাকা কলেজের একটি ছাত্রাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে তাঁরা কয়েক দফা ইটপাটকেল ছোড়েন। দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আবার সংগঠিত হয়ে ওই ছাত্রাবাসে ঢোকেন। এ সময় শিবিরের কিছু কর্মী দৌড়ে বের হয়ে দেয়াল টপকে পালিয়ে যান। অন্যরা মারমুখী হয়ে দাঁড়ালে ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে তাদের এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি হয়। এতে এমসি কলেজের শিবির নেতা ইয়াছিন খান ও নজরুল ইসলাম এবং সরকারি কলেজের শিবিরকর্মী মামুন, মনজুর, কয়েস ও রাজন আহত হন। তাঁদের সিলেট নগরের আল বান্না হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

একপর্যায়ে শিবিরকর্মীরা পিছু হটে ছাত্রাবাস ছেড়ে চলে যান। এ সময় ছাত্রাবাসে শিবির নিয়ন্ত্রিত ২৫টি কক্ষে আগুন লাগান ছাত্রলীগের কর্মীরা। খবর পেয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ ক্যাম্পাসে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। দমকলকর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।
ওসি মোহাম্মদ আলী জানান, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ বা অন্য কেউ পুলিশকে লিখিতভাবে কিছু জানায়নি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে।

সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ইফতেখার আলম জানান, ওই ছাত্রাবাসের ২৫টি কক্ষে আগুন দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টি ব্যাপকভাবে ও ১৩টি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ছাত্রলীগ সিলেট সরকারি কলেজ শাখার আহ্বায়ক দেবাংশু দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজশাহীর ঘটনার পর থেকে শিবির ক্যাডাররা ক্যাম্পাস ছাড়া ছিল। বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান উপলক্ষে বহিরাগতদের নিয়ে তারা ক্যাম্পাসে হাজির হয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই নিয়ে আতঙ্ক ছিল। এ জন্য ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে তাদের ক্যাম্পাস ছাড়া করে।’

ছাত্রাবাসে আগুন দেওয়ার বিষয়ে দেবাংশু দাস বলেন, ‘এগুলো চারদলীয় জোট সরকারের আমল থেকেই শিবির ক্যাডারদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্ররা সেখানে হামলা চালিয়েছেন।’

ছাত্রলীগ নেতার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবিরের কলেজ শাখার সভাপতি শাহীন আহমদ বলেন, ‘এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পুলিশের আশ্রয়ে হামলা চালিয়ে শিবিরকর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছে।’ বহিরাগতদের প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আবদুস সোবহান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালে এ ঘটনা ঘটে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। ১০ মার্চ পর্যন্ত কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ থাকবে।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন