হাজতখানায় আসামিদের সঙ্গে জামায়াত নেতার দীর্ঘ 'আলাপ' চট্টগ্রাম অফিসচট্টগ্রামে অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াতের ১২ নেতা-কর্মীর সঙ্গে টানা এক ঘণ্টা আলাপ করলেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালত ভবনের লক-আপে (আদালতের হাজতখানা) এই আলাপ করেন। তিনি জামায়াত নেতা ডা. একরামুল হকের সঙ্গে লক-আপের বারান্দায় রাখা টুলে বসেন এবং বাকিদের সঙ্গে লক-আপের দরজায় দাঁড়িয়ে কথা বলেন। তবে এত সময় নিয়ে তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি।
গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি আদালতে গিয়ে দেখেন জামায়াত নেতা আসামিদের সঙ্গে কথা বলছেন। সাংবাদিক দেখে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা শাহজাহান চৌধুরীকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। এ সময় শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গে আরো ছয়জন শিবির নেতাকে লক-আপে অবস্থান নিয়ে গ্রেপ্তারকৃতদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। এ সময় শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী লক-আপের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল।
রিমান্ড শুনানির জন্য গতকাল এসব আসামিকে আদালতে আনা হয়। বিকেলে আদালতে রিমান্ডের শুনানির সময়ও শাহজাহান চৌধুরী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গ্রেপ্তার হওয়া জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতা-কর্মীকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অস্ত্র মামলার এসব আসামিকে আদালতে আনার পর আমি দুই বার লক-আপ পরিদর্শন করে এসেছিলাম। এ সময় শাহজাহান চৌধুরী লক-আপের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন আসামিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাঁকে এ সময় অনুমতি দেওয়া হয়নি।' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ সদস্য বলেন, নির্মলেন্দু বিকাশ পরিদর্শন করে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী নিজের প্রভাব খাটিয়ে লক-আপে ঢোকেন।
আসামির সঙ্গে কোর্ট লক-আপে কেউ দেখা করতে চাইলে আদালত থেকে তাকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হয় বলে জানালেন মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আদালতের অনুমতি ছাড়া কোর্ট লক-আপে সাক্ষাৎ করার কোনো বিধান নেই।'
পুলিশ সদস্যদের অনুরোধে লক-আপ থেকে চলে যাওয়ার সময় এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী গেটে দাঁড়িয়ে কালের কণ্ঠ প্রতিনিধিকে বলেন, 'গ্রেপ্তারকৃত নেতা-কর্মীদের আইনি সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আমি এখানে এসেছি।' তাদের সঙ্গে কী কথা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আইনগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ওরা (গ্রেপ্তারকৃতরা) আমাকে জানিয়েছে তাদের কাছ থেকে একটি পেরেক পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। যেখান থেকে পুলিশ অস্ত্র উদ্ধার করেছে সেখানে এদের কেউ থাকত না।'
রিমান্ড মঞ্জুর : মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম ওসমান গনি গতকাল বিকেলে শুনানি শেষে ১২ আসামির রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এর মধ্যে জামায়াত নেতা ডা. একরামুল হককে এক দিন, শিবির কর্মী মঞ্জুর আলম, মহিউদ্দিন, জাহেদ মুনতাসির ও লুৎফর রহমানকে দুই দিন এবং গোলাম আজম আব্বাসী, একরামুল হক, মিজানুর রহমান, জহির উদ্দিন বাবর, রকিবুল হোসেন, আরিফ হোসেন ও সৈয়দ আল আমিনের তিন দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
এদের প্রত্যেকের জন্য পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার ওসি একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ। গতকাল বিকেলে ওসি একেএম মঞ্জুরুল হক আকন্দ দৈনিক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আদালত থেকে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এদের সবাইকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।'
গত রবিবার মধ্যরাতে নগরীর আগ্রাবাদ মিস্ত্রিপাড়া এলাকার একটি মেস থেকে সাতটি অস্ত্র, ৩৭ রাউন্ড গুলি, এক কেজি বিস্ফোরক এবং অন্যান্য সরঞ্জামসহ জামায়াত-শিবিরের ১২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এই ঘটনায় ডবলমুরিং থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন