একরামুল হক, চট্টগ্রাম | তারিখ: ২০-০১-২০১০
কয়েক মাস আগেও প্রতিদিন চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রদের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। এ নিয়ে পুলিশ বেশ হিমশিম খাচ্ছিল। সংঘর্ষের কারণ তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ খুঁজে পায়, এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি মেস। আর এ মেসগুলো চালায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রায় চার মাস আগে খুলশী থানার পুলিশ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আশপাশের পাঁচটি মেস বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সহিংসতার ঘটনা অনেক কমে যায়।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইফতেখার হাসান বলেন, শিবির সম্প্রতি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংলগ্ন রেললাইনের পাশে একটি মেস ভাড়া নিয়েছে। ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরের সময় তারা ওই মেস থেকে সংগঠিত হয়ে পলিটেকনিকে হামলার প্রস্তুতি নেয়। পুলিশ খবর পেয়ে অবশ্য তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। গত রোববার রাতে নগরের মিস্ত্রিপাড়ায় শিবিরের মেসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে সাতটি অস্ত্র, ৩৭টি গুলি, বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করে। এ ঘটনায় জামায়াতের সক্রিয় কর্মী একরামুল হক, তাঁর ছেলে এবং শিবিরের ১০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ‘হক ভিলা’ নামের ওই ভবনে শিবিরের মেসে বিপুল অস্ত্র পাওয়ার পর নগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন। কারণ, নগরে শিবিরের এ রকম ১৩৫টি মেস রয়েছে বলে পুলিশ তথ্য পেয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগর পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শিবিরনিয়ন্ত্রিত মেসগুলোতে অস্ত্র নেই—এটা এখন বিশ্বাস করা কঠিন। হক ভিলা থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। তাই শিবিরের সব মেসে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা।’
শিবিরের নগর দক্ষিণ কমিটির সভাপতি আবদুল জব্বার অবশ্য দাবি করেন, মেসে থাকা শিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা পড়াশোনা ও টিউশনির বাইরে অন্য কাজে জড়িত নন। উত্তর কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ কলিম উল্লাহ অভিযোগ করেন, ‘শিবিরের ইতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার ঈর্ষান্বিত হয়ে অস্ত্র উদ্ধারের নামে নাটক মঞ্চস্থ করেছে।’ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নগরে শিবিরের পরিচালিত ১৩৫টি মেস রয়েছে। এর মধ্যে নগরের দক্ষিণাংশে ১০২টি ও উত্তরাংশে রয়েছে ৩৫টি মেস। প্রতিটি মেসে ৫০-৬০ জন করে নেতা-কর্মী থাকেন। শিবিরের সমর্থক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়-মাদ্রাসার ছাত্র ও চাকরিপ্রার্থীদের মেসে রেখে সংগঠনের কর্মকাণ্ড চালানো হয়।
পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, মিস্ত্রিপাড়ার হক ভিলার মতো অনেক মেসে কৌশলে অস্ত্রশস্ত্র মজুদ থাকতে পারে। এসব মেস শিবিরের গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। স্বল্প সময়ের নোটিশে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মীকে জড়ো করতে শিবির এসব মেসের সদস্যদের কাজে লাগায়। এভাবে দুই সপ্তাহ ধরে প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বর থেকে জামায়াত-শিবির বড় ধরনের মিছিল বের করছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সম্প্রতি শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ এবং ছাত্রাবাসে আগুন লাগানোর সঙ্গে আশপাশের মেসের শিবিরকর্মীদের সম্পৃক্ততা ছিল। ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া দুজন শিবিরকর্মী পুলিশের কাছে বিষয়টি স্বীকারও করেছেন। চকবাজার, সিরাজুদ্দৌলা সড়ক, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, শুল্কবহর প্রভৃতি এলাকায় মেস করে শিবিরকর্মীরা মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, মহসীন কলেজসহ ওই এলাকায় আধিপত্য বজায় রেখেছে।
ছয়জনকে খুঁজছে পুলিশ: রোববার রাতে হক ভিলায় অভিযান শুরুর প্রায় তিন ঘণ্টা আগে শিবিরের অন্তত ছয়জন শীর্ষ নেতা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। অস্ত্রগুলো তাঁদের বলে পুলিশ ধারণা করছে। শীর্ষ ওই ছয় নেতাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুরুল হক আকন্দ বলেন, ‘মেসের বড় ভাই হিসেবে পরিচিত ছয়জনকে আমরা খুঁজছি।’
কাল জামিনের শুনানি: হক ভিলা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ১২ জনকে গতকাল চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম হোসাইন মো. ফজলুল বারির আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আগামীকাল বৃহস্পতিবার তাদের রিমান্ডের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। পুলিশ এদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে।
খবরের লিংক
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন