3 November 2009

শিক্ষানীতি নিয়ে বিদেশিদের কাছে শিবিরের ‘নালিশ’!

ওয়াসেক বিল্লাহ্ | তারিখ: ০৩-১১-২০০৯

বাংলাদেশের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি নিয়ে বিদেশি দূতাবাসের কাছে নালিশ করেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০০৯-এর চূড়ান্ত খসড়া নিজেদের মতো পর্যালোচনা করে প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষানীতি ও আমাদের বক্তব্য শীর্ষক একটি পুস্তিকা তৈরি করেছে শিবির। সেটি ইংরেজি ও আরবি ভাষায় অনুবাদ করে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিগত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে জঙ্গি তত্পরতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে তত্কালীন বিরোধী দল আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছিল। সে সময় জামায়াত ও ছাত্রশিবির দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় বিদেশিদের কাছে তুলে ধরায় তীব্র সমালোচনা করেছিল।

শিক্ষানীতি নিয়ে শিবিরের সমালোচনামূলক এই বই কোনো শিক্ষাবিদ বা জ্যেষ্ঠ কোনো শিক্ষক লেখেননি। সংগঠনের গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শাকিলউদ্দিনের নেতৃত্বে সংগঠনের কর্মীরা এটা লিখেছেন। ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ রেজাউল করীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা আমাদের নিজস্ব গবেষণা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েটে (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) আমাদের অনেক কর্মী আছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ভাবধারার শিক্ষকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলি। এভাবেই আমরা এ প্রকাশনা করি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, শিক্ষানীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে সমালোচনামূলক বই লেখার আগে কোনো বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী বা শিক্ষাবিদের সঙ্গে কথা বলেনি ছাত্রশিবির।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলায় প্রকাশ হয় পুস্তিকাটি। ৫ অক্টোবর এর সংশোধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ বের হয়। ইংরেজি সংস্করণ বের করা হয় আরও এক সপ্তাহ পর। পরে বের করা হয় আরবি সংস্করণ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের জন্য এই সংস্করণ করা হয়।

শিবিরের সভাপতি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সব দূতাবাস ও হাইকমিশনে এই পুস্তিকা পৌঁছে দিতে সংগঠনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেন।

দেশের শিক্ষানীতি নিয়ে কেন বিদেশিদের কাছে গেলেন—জানতে চাইলে শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘তারা বিষয়টি জানল, আমাদের এখানে কী হচ্ছে।’ জোট সরকারের সময় একই কাজের জন্য তত্কালীন বিরোধী দলের সমালোচনা করলেও নিজেরা বিরোধী দলে আসার পর একই ধরনের কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে শিবিরের সভাপতি বলেন, ‘যদি কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন না হয়, তা হলে সমস্যা কী?’

দূতাবাসগুলোর পাশাপাশি সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও এই পুস্তিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবিরের সভাপতি। পাশাপাশি প্রতি জেলায় জেলা প্রশাসকের কাছে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে শিবির। গত ১১ থেকে ২০ অক্টোবর শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা।

পুস্তিকায় যা বলা হয়েছে: প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির ১২টি সমালোচনা দাঁড় করেছে ছাত্রশিবির। এর প্রতিটাই ধর্মশিক্ষা ও মাদ্রাসাশিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। ১০টি সুপারিশের উল্লেখও আছে পুস্তিকায়। আছে শিক্ষানীতির কয়েকটি দিকের প্রশংসাও।

‘উল্লেখযোগ্য দিকগুলো’ শিরোনামে প্রথমেই বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত খসড়া রিপোর্টটি পর্যালোচনা করে আমরা এর মধ্যে কতক আশাব্যঞ্জক দিক খুঁজে পাই। শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী একটি শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের যে দাবি বহুদিন ধরে উত্থাপিত হচ্ছিল, তার অনেকখানি এ রিপোর্ট ধারণ করছে। বিশেষ করে শিক্ষার কাঠামোগত সংস্কার সাধনের মাধ্যমে স্তরগত পুনর্বিন্যাস প্রবর্তন ছিল সময়ের দাবি। এর বাইরেও কতক বিষয় উঠে এসেছে, যা শিক্ষার মনোন্নয়নের মাধ্যমে একটি কল্যাণধর্মী উন্নত জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

তবে শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যবস্তু হিসেবে থাকা ‘সেক্যুলার (ধর্মনিরপেক্ষ)’ শব্দ রাখার সমালোচনা করেছে শিবির। শিবির দাবি করেছে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানকে সুকৌশলে বিকৃত করা হয়েছে।
নবম শ্রেণী থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক না করার সুপারিশের সমালোচনা করে শিবির বলেছে, ‘সাধারণ শিক্ষাধারার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাক্রম থেকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা বাতিল করা হয়েছে। শুধু মানবিক শাখা ও ভোকেশনাল শিক্ষার নবম ও দশম শ্রেণীতে একে ঐচ্ছিক বিষয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে এটি টিকে থাকতে পারবে না।’

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কোরআন মজিদ অন্তর্ভুক্ত করারও দাবি জানিয়েছে শিবির। এতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষানীতি-২০০৯-এর চূড়ান্ত খসড়ায় একদিকে বলা হয়েছে যে, মাদ্রাসা শিক্ষাধারার স্বকীয়তা রক্ষা করা হবে, অন্যদিকে খসড়া রিপোর্টে প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমে এর মৌলিকত্ব ও স্বাতন্ত্র্যের ওপর অপরিণামদর্শী হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।’

প্রতিবেদনে সরকারি উদ্যোগে জাতীয় চিত্রশালা, সংগীত ও নৃত্য একাডেমি, নাট্য ও রঙ্গমঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা ও ললিতকলা শিক্ষা দেওয়ার সুপারিশেরও সমালোচনা করা হয়েছে।

শিক্ষানীতির খসড়ায় নারীশিক্ষাকে উত্সাহিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও শিক্ষাঋণ দেওয়ার সুপারিশেরও সমালোচনা করেছে শিবির।


খবরের লিংক

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন