ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কায় গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষসহ কয়েকটি স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। পরে রাত ১০টার দিকে পুলিশ হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শিবিরের নিয়ন্ত্রিত একটি ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। পরিস্িথতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল দুপুরের দিকে ক্যাম্পাসে খবর ছড়িয়ে পড়ে শিবির বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অস্ত্রসহ বহিরাগতদের নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। এ খবর পেয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে ক্যাম্পাসের সামনে অবস্থান নেয়। পরিস্িথতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এ সময় ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের কর্মীরা শিবিরের ছাত্রাবাসের সামনে অবস্থান নিলে শিবির ও ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্িথতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
বিকেল পাঁচটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধ এবং সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে উপাচার্যের কক্ষ, ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কক্ষসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তারা কাজী নজরুল ইসলাম হলে ঢুকে কয়েকজন শিবিরকর্মীর কম্পিউটার ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
পুলিশ রাত ১০টার দিকে আবাসিক হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, প্রশাসন সন্ধ্যা ছয়টায় হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর করেনি। এখন রাত ১০টায় তাঁদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই জানেন না এখন কোথায় যাবেন। একজন শিক্ষার্থী বলেন, ২৩ আগস্ট থেকে সব বিভাগের পর্ব সমাপনী পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার শিবির নিয়ন্ত্রিত একটি ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচজন শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ। তবে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ পাঁচজনকে আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তাদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে।
ছাত্রলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুম অভিযোগ করেন, শিবির বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের রক্ষার জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। পাল্টা অভিযোগে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আসাদুল্লাহ বলেন, শক্তি প্রদর্শনের জন্য ছাত্রলীগ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম সবদার আলী বলেন, সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ কার্যকর করতে দেরির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছয়টায় হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তখন থেকেই নির্দেশ কার্যকর হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত পোস্টারের ওপরে শিবির পরিচালিত একটি কোচিং সেন্টারের পোস্টার লাগানোর জের ধরে গত মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগ বিভিন্ন আবাসিক হলে শিবির কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এতে ছাত্রশিবিরের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন আহত হন। এ সময় শিবির ক্যাম্পাস ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর ছাত্রলীগ এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ক্যাম্পাসে শিবিরের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। রাত সাড়ে ১১টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিল।
No comments:
Post a Comment
মন্তব্য করুন