4 May 2011

দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা: নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বহুল আলোচিত দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরীর করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারী গতকাল বুধবার তা মঞ্জুর করেন।

অস্ত্র আটকের ঘটনায় অস্ত্র এবং চোরাচালান আইনে করা দুটি মামলায়ই জামায়াতের এই শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

ঢাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চট্টগ্রাম আনা হলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে_এ আশঙ্কায় নিজামীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি চান তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত নিজামীকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।

এর আগে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান চৌধুরী গতকাল দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিভিন্ন আসামি ও সাক্ষীর দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে মতিউর রহমান নিজামীর ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। তাই তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাতে আবেদন জানিয়েছিলাম। কয়েক দিনের মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।'

উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত মতিউর রহমান নিজামী বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ২১ জুলাই পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ২০০৪ সালে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের সময় নিজামী তৎকালীন জোট সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।

মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনের শুনানির সময় অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম সেন্টু আদালতে বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সিইউএফএল জেটি ঘাটে খালাসের সময় নিজামী এ ব্যাপারে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেননি। এমনকি সিইউএফএলসহ সরকারি বিভিন্ন মাধ্যম তাঁর কাছে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি চেয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনো অনুমতি না দিয়ে তাদের নিবৃত্ত করেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় নিজামী ঘটনায় জড়িত।'

গতকাল সকালে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে গিয়ে গভর্নমেন্ট রেকর্ড অফিসারের (জিআরও) কাছে নিজামীকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনপত্র জমা দেন। এরপর তা মহানগর হাকিম এইচ এম ফজলুল বারীর খাস কামরায় নিয়ে যাওয়া হলে তিনি প্রকাশ্য আদালতে শুনানির নির্দেশ দেন। পরে বিকেলে প্রকাশ্যে শুনানি শেষে আবেদন গ্রহণ করা হয়।

প্রসঙ্গত ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলী থানাধীন সিইউএফএল জেটি ঘাট থেকে দশ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে করা দুটি মামলা আদালতের নির্দেশে তিন বছর ধরে সিআইডি অধিকতর তদন্ত করছে। আগামী ১৫ মের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ২০ জন সাক্ষী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

অধিকতর তদন্ত শুরু হওয়ার পর সিআইডি নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়াও এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম, পরিচালক উইং কমান্ডার শাহাবুদ্দিন, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন খান, সরকারি সার কারখানা সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহসীন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) এনামুল হককে গ্রেপ্তার করেছে।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন