14 July 2010

কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক | তারিখ: ১৪-০৭-২০১০


জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লাকে পল্লবী থানা এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট থেকে বের হওয়ার পর দুই ঘণ্টার ব্যবধানে প্রথমে কাদের মোল্লাকে এবং পরে কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দুপুর ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলায় কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাসহ চারজন আগাম জামিনের জন্য হাইকোর্টে হাজির হন। পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শাহবাগ থানায় গত ২৯ জুন এবং একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগে কেরানীগঞ্জে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর দায়ের করা মামলায় কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, নাজিমউদ্দিন ও আবুল হাশেম জামিনের আবেদন করেন।
বেলা সোয়া তিনটায় বিচারপতি আফজাল হোসেন আহমেদ ও বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে জামিন আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। সরকারপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল মান্নান প্রস্তুতির জন্য এক দিন সময়ের আবেদন জানান। এ পর্যায়ে আদালত জামিন আবেদন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের হয়রানি ও গ্রেপ্তার না করতে নির্দেশ দেন।
কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা আদালত থেকে বেরিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকের কক্ষে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে কাদের মোল্লা বার কাউন্সিলসংলগ্ন সুপ্রিম কোর্টের ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় বিকেল সোয়া চারটার দিকে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার কৃষ্ণপদ রায় তাৎক্ষণিকভাবে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত যে দুই মামলায় গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করার নির্দেশ দিয়েছেন, সেসব মামলায় কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ওই সময় আইনজীবী আবদুর রাজ্জাকের কক্ষে ছিলেন কামারুজ্জামান। সঙ্গে সঙ্গে কাদের মোল্লার গ্রেপ্তারের বিষয়টি আদালতকে অবহিত করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আবদুর রাজ্জাক।
কাদের মোল্লার গ্রেপ্তারের পর আবদুর রাজ্জাকের কক্ষের সামনে জামায়াত সমর্থক আইনজীবী ও গণমাধ্যমের কর্মীরা ভিড় জমান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কক্ষ থেকে বেরিয়ে কামারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জামিন নিতে এসেছিলাম। আদালত আমাদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। আদালতের আদেশ অমান্য করা হয়েছে। কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার অন্যায়ভাবে জুলুম করছে। এ সরকার ফ্যাসিবাদী ও মানবাধিকারবিরোধী সরকার।’

সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে মাইক্রোবাসে করে সুপ্রিম কোর্টের ওই একই ফটক দিয়ে বের হওয়ার সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকেও গ্রেপ্তার করে।

রমনার অতিরিক্ত উপকমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যে মামলায় আদালত তাঁদের গ্রেপ্তার করতে না করেছেন, সে মামলায় কামারুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পল্লবী থানার পুলিশ জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি পল্লবীর দুয়ারীপাড়ার বাসিন্দা আমীর হোসেন মোল্লা বাদী হয়ে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নেতা সরদার আবদুস সালাম, খাজা আমিনউদ্দিন (মৃত), আকতার গুণ্ডাকে (পাকিস্তানে পলাতক) আসামি করে পল্লবী থানায় মামলা করেন। পুলিশ জানায়, ওই মামলায় গতকাল কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামিদের সঙ্গে আরও অপিরিচিত ৬০-৭০ জন অবাঙালিকে নিয়ে কাদের মোল্লা নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। তাঁরা গণহত্যায় অংশ নেন।

মামলার বিবরণে আরও বলা হয়, ১৯৭১ সালের আমীর হোসেন মোল্লা মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে ১০০-১৫০ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে আসামিদের আস্তানা আক্রমণ করেন। তখন কাদের মোল্লার নেতৃত্বে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, মীর আবুল কাশেম, সরদার আবুল কালামসহ অন্য আসামিরা ভারী অস্ত্র নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি চালায়। এতে বাদী আমীর হোসেন মোল্লার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার শহীদ হন। বাদীর ডান পায়ে ও ডান হাঁটুতে গুলি লাগে। পরে স্বজনদের খুঁজতে এসে অনেকেই ঘাতক আল-বদরদের হাতে নিহত হন।

পুলিশ জানায়, মামলাটি এখন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ—সিআইডি তদন্ত করছে। গ্রেপ্তারের পর জামায়াতের দুই নেতাকে সিআইডিতে নেওয়া হয়। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁদের সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল।

জামায়াতের তিন নেতার রিমান্ড: দুটি মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রিমান্ড বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে বাতিল আবেদন শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়। আজ শুনানি হতে পারে।

তাঁদের আইনজীবী ইমরান এ সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত গতকাল এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, পুলিশ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে তাঁদের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের সময় কামারুজ্জামানের সঙ্গে পুলিশ অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে।

বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার প্রমাণ করেছে, তারা যেকোনোভাবে জামায়াতে ইসলামীকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যে কারণে পাইকারিভাবে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করা হচ্ছে। বিবৃতিতে গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবি করা হয়।

No comments:

Post a Comment

মন্তব্য করুন